
এক
যে নির্বাচনটাকেই অবৈধ বলে দাবী করা হয় সেই নির্বাচনের ফলাফলকে মামলা করে চ্যালেন্জ জানানো মানে নির্বাচনটা অবৈধ ছিল না। কোর্টের রায়, ফলাফল বাস্তবায়নের জন্যে রাস্তায় আন্দোলন ভবিষ্যতে এক সময় রেফারেন্স হিসেবে আসবে। এই একটি বিষয় বিগত সরকারের আমলের নির্বাচনগুলোকে অবৈধ বলা থেকে রক্ষা করবে। এমনিতেই ২০১৮ সালের নির্বাচনে দেশের তিনটি বড় রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের বিষয়টি সেই নির্বাচনকে অনেকটাই বৈধতা দিয়ে ফেলেছে, তার উপর চট্টগ্রাম ও ঢাকা দক্ষিনের সিটি নির্বাচনের কয়েক বছর পর এইসব স্ববিরোধী দাবী দেশকে অস্থিতিশীল করার ঘি তে আগুন দেয়া নয় তো? এ মুহুর্তে দেশের সবচেয়ে দায়িত্বশীল বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির মুল নেতৃবৃন্দকে গভীরভাবে বিষয়গুলো ভেবে দেখা দরকার। তবে সবচেয়ে ভাল হয় যাতে দ্রুত স্হানীয় সরকার সংস্কার বাস্তবায়ন করে দু তিন মাসের মধ্যে দেশের সকল সিটি ও স্হানীয় সরকার নির্বাচনের আয়োজনে চাপ দেয়া। স্হানীয় সরকারের নুতন নির্বাচনে ইশরাক হোসেন বিজয়ী হবেন বলে ধারণা করি এবং সেটা হবে অনেক বেশী গৌরবের বিজয়।
দুই
আমাদের চারপাশে যা কিছু ঘটছে অনেক কিছুই আজকাল অর্থহীন মনে হয়। কোন কিছুতেই আর কিছু এসে যায় না, এরকম একটা অনুভূতি মনে কাজ করে। ফিলিস্তিনের গাজায় যা ঘটছে, যারা ঘটাচ্ছে তারাই আবার রোহিঙ্গাদের জন্যে মানবিক করিডর দেবার জন্যে চাপ দেয়। আমরা যদি গাজাকে উপেক্ষা করতে পারি, তাহলে রোহিঙ্গাদের উপেক্ষা করতে পারবো না কেন? একটা জনপদ নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে, শিশুদেরকে এখন না খাইয়ে মারছে, গোটা গাজা চিরদিনের জন্যে দখল নিতে চাইছে, হাসপাতাল স্কুল কোন কিছুতেই বোমা মেরে নিশ্চিহ্ন করা বাকী রাখে নি, সেই মুহুর্তে নাটেরগুরুর মধ্যপ্রাচ্যে এমন আদর আপ্যায়ন করা হলো, যা কল্পনাতীত। তারা ট্রিলিয়ন ডলারের ব্যবসা চুক্তি করলো, তেলে ঝোলে বিলাসি ঝলমলে স্বর্ণখচিত দন্ত বিকশিত করে যে মুহুর্তে ফটোসেশন করছেন সেই মুহুর্তে আকাশ বাতাশ প্রকম্পিত করে উড়ে আসা অত্যাধুনিক ক্ষেপনাস্ত্রের আঘাতে ধ্বসে পড়া হাজার টন ভারী কোন কংক্রিটের ধংসস্তূপের নীচে হাড্ডিসার ক্ষুধার্ত শিশুগুলো প্রাণপন শক্তিতে জীবনের শেষ প্রাণশক্তিটুকু রক্ষা করতে চেষ্টা করছে।
প্রতিদিন মিথ্যার বেসাতী, প্রমাণিত দুর্নীতিবাজ, চাটুকারদের আরো চাই আরো চাই নীতির সাদা ঘু পোকাগুলোর অসংখ্য ঘোর সমর্থক দেখে মানুষ দিন দিন অনুভূতিহীন হবে, ভাল মন্দের ভেদাভেদ ভুলে যাবে, এর মধ্যেও চলবে আহা বেশ আহা বেশ, তোষামোদে খোশ আমোদ! খোশ রহো, আমার কোন কিছুতেই আজকাল আর কিছুই আসে যায় না! তুমি ফকির থেকে ধনী হও কিংবা ধনী থেকে আরো ধনী হও, এমপি হও, মন্ত্রী হও, তোমার নাম যদু না মধু, আমার তাতে কিছুই …ড়া যায় না।
তিন
ড. ইউনুস পদতাগ করার জন্যে যেসব কারণ বলেছেন তার মধ্যে একটা হলো সংস্কারের বিষয়ে হতাশা। তিনি বলেছেন, সংস্কারের বিষয়েও এখনো তেমন কিছু হলো না। তাহলে তিনি কেন থাকবেন—এমন প্রশ্নও আলোচনায় আনেন বলে একটা পত্রিকায় দেখলাম। অথচ তিনি নিজে চাইলে সংস্কারের প্রধান দশ/বারটা বিষয় দুই দিনেই চূড়ান্ত করা সম্ভব ছিল। প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে দুতিন দিন একটা বদ্ধ ঘরে টানা বৈঠক করে দশ থেকে বারটা সংস্কার ফাইনালাইজ করে গেজেট প্রকাশ করা সম্ভব ছিল। অথচ সেটা না করে তিনি এগুলো ছেড়ে দিয়েছেন জনগণের সাথে সম্পর্ক বিহীন কয়েকজন অথর্ব ব্যক্তির উপর। অথচ সংস্কার না হবার সকল দায়িত্ব গিয়ে পড়বে স্বয়ং ড. ইউনুসের ঘাড়ে। কেউ বলবে না, ড. বদিউল আলম মজুমদার কিংবা ড. তোফায়েল আহমেদ বা ড. আলী রীয়াজ ব্যর্থ হয়েছেন। সবাই বলবে ড. ইউনুস ব্যর্থ হয়েছেন। অথচ এখন তিনি নিজেই এ বিষয়ে অগ্রগতি না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন। হতাশা প্রকাশ করেছেন সেনা প্রধানসহ আরো অনেকে।
করিডোরের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে না বলতে হবে ড. ইউনুসকে। আজ যদি তিনি না যাবার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে তাঁর উচিত সব রাজনৈতিক দলের সাথে একটানা ম্যারাথন চার পাঁচদিন বৈঠক করে একমত হওয়া মুল সংস্কার প্রস্তাবগুলো অধ্যাদেশ আকারে জারী করা এবং তা গেজেট নোটিফিকেশন করে দেশবাসীকে দ্রুত জানিয়ে দেয়া।
স্কারবোরো, কানাডা