
আজাদ রহমান কত বড় সঙ্গীতজ্ঞ তা দেশের মানুষের কাছে পুরোপুরি বিবেচিত হয়নি এখনো। প্রায় মানুষের সঙ্গীত জ্ঞানের হয়তো অভাবে। বিশ্বর প্রথম বাংলা খেয়ালের এল পি তিনিই তার কন্ঠে ধারণ করে রেকর্ড করে বের করেছিলেন। যা দুই বাংলায় সেই প্রথম। আমার সৌভাগ্য তিনি আমাকে কাভার ডিজাইন করতে বলেছিলেন। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম রং-তুলি দিয়ে এঁকে না করে আরেকজন বিশ্ব নন্দিত ফটোগ্রাফার আনোয়ার হোসেনের ছবির সাহায্য নিতে।
আমার অনুরোধ আর আজাদ রহমানের বাংলা খেয়াল শুনে ছবি তুলে দিতে রাজী হলেন আনোয়ার হোসেন। সাথে ব্যাগে করে নিয়ে এলেন হাতি-ঘোড়ার লোকজ মাটির পুতুল। হাতে ধরিয়ে পোট্রেট তুলবেন। আনোয়ার ভাইয়ের কম্পোজিশানের ব্যাপারই আলাদা। ৬৪/সি গ্রীন রোড সেলিনা ভাবী ও আজাদ ভাইয়ের পাঁচ তলা বাড়ি। গ্রাউন্ড ফ্লোরে তাঁর ‘মুভিটোন’ নামের রেকর্ডং স্টুডিও। পাশে পার্কিং জায়গায় মাঝারী চৌকী পেতে কার্পেট পাতা হলো। সাদা শাল গায়ে তানপুরা হাতে আজাদ রহমান তাতে বসলেন। আনোয়ার ভাই তার তাতে হাতির পুতুল ধরিয়ে দিয়ে মধ্যদিনের আলোছায়াতে ঘুরে ঘুরে ছবি তুল্লেন।
মাত্র বিশ মিনিটে ঘটনা শেষ। এককাপ চা খেতে আরো দশ মিনিট পর আনোয়ার ভাই দৌড় দিলেন এফ ডি সি।সেখানে তার কোনো সুট করা মুভির প্রসেসিং চলছে দেখে ছাড়বেন তিনি। আনোয়ার ভাইকে দিয়ে ছবি তুলিয়ে ফেলেছি আর যায় কই! ডিজাইনতো আমি করে ফেলবো। সব হয়েও গেলো। উন্মোচন অনুষ্ঠান ডিনার সহ সোনার গাঁও হোটেলে। ঘাবরে গেলাম।আশা করিনি। গিয়েতো আরো চমক কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা তিনজন গণ্যমান্য সাংবাদিক পাঠিয়েছে দেশ-আনন্দবাজার ও এক ইংরেজী পত্রিকার জন্যে তার মধ্যে শংকরলাল ভট্টাচার্য্য ও রয়েছে।
অবাক হয়ে ভাবি স্বনামধন্য আজাদ রহমান কোন গগনের তারা! তা টেরই পাইনা যেহেতু সুকন্ঠি কন্ঠশিল্পী সেলিনা আজাদ ও আজাদ রহমানের ঐতিহাসিক ৬৪/সি গ্রীন রোড বাড়ির চারতলা জুড়ে আমি স্ত্রী শাহানা ও একমাত্র সন্তান অগ্নিলাকে নিয়ে থাকি। বিয়ের আগে কলাবাগান লেকসার্কাসে ড.মুহাম্মদ ইউনুসের ছোট ভাই মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরের সাথে তিন রুমের ফ্ল্যাট শেয়ার করে থাকতাম। বিয়ের মাস খানেক পরে এখানে যে এলাম প্রায় আঠারো বছর পার।কানাডা পাড়ি দেয়া পর্যন্ত ছিলাম। বলা যায় গোটা ঢাকার জীবন। গুলশান মডার্ণ ক্লিনিকে অগ্নিলা জন্মানোর পর এখানেই খেলে দুলে গ্রীনহেরাল্ড স্কুলে গিয়ে সে বড় হয়েছে।
আমি থাকলেইতো আর ঐতিহাসিক হবেনা। এখানে আজদ ভাইয়ের ডান হাত হয়ে থাকতেন জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত গীতিকার কমরেড হাসান ফকরী। সালাউদ্দিন লাভলুর প্রথম বিবাহিত জীবন শুরু হয়েছে এখানে। প্রথম সন্তান ‘সুখ’ তাকে ছেড়ে গেছে এখানেই। নিচে ‘মুভিটোন’ স্টুডিওতে বাংলাদেশের সিনেমা ও সঙ্গীতে স্বনামধন্য খ্যাতিমান কে আসতেননা তা আমার পক্ষে ভেবে বের করা মুস্কিল।
বিশেষ করে মনে পড়ে লোদীর হাস্যময় সরল মুখ বছরের পর বছর বিটিভির জন্যে সিনেমা বিষয়ক অনুষ্ঠান সুট করতেন মুভিটোনে। অকাল মৃত্যুতে আজ নেই। খুব ইচ্ছে হয় আমার দেখা আজাদ রহমানকে নিয়ে লিখি। ঘটনাবহুল আমার প্রায় দুই দশক আশ্রয় দেয়া ৬৪/সি গ্রীন রোডকে নিয়ে লিখি।
স্কারবোরো, কানাডা