
এক হাজার মানুষ ধারন ক্ষমতার হল “টরন্টো প্যাভিলিয়ন” প্রতিটি আসন পূরণ করে বসে আছেন দর্শক শ্রোতা। এছাড়াও পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন বহু বহু মানুষ। পিনপতন নীরবতা, সকলের দৃষ্টি আটকে আছে মঞ্চের দিকে, চোখের পলকে পড়ছে না। মঞ্চে কিন্নর কন্ঠে গানে টান দিয়েছেন জীবন্ত কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। একাত্তর বছর বয়সেও তাঁর কন্ঠের টান সকলকে নিয়ে গেছে অন্তত বিশ ত্রিশ বছর আগে। নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত ছেলেবুড়ো সকল দর্শক হয়েছে মন্ত্রমুগ্ধ।
আশেপাশে একটু তাকিয়ে দেখলাম, অনেকেরই চোখ দিয়ে টপটপ করে অশ্রু ঝরছে। বুঝলাম সাবিনা ইয়াসমিন তাঁর কন্ঠের জাদু দিয়ে দর্শকদের অন্তরের অত্যন্ত খুব গভীর কোনও অনুভূতিতে নাড়া দিয়েছেন। টরন্টো প্যাভিলিয়নে বসে থাকলেও আসলে তাঁরা চলে গেছেন যার যার স্মৃতির সেই স্থানে যেখানে পরম আদরে পুষে রেখেছেন সাবিনা ইয়াসমিনের কালজয়ী সব গান।
তিনি প্রথম পরিবেশনায়ই আমাদের নিয়ে গেছেন হাজার কিলোমিটার দূরে ফেলে আসা ছোট্ট আমাদের সবার প্রাণের দেশ বাংলাদেশে। সুন্দর সুবর্ণ তারুণ্য লাবন্য অপূর্ব রূপসী রুপেতে অনন্য। আমাদের রক্তে খেলে গেছে শিহরণ, দেশ থেকে দূরে থাকা দেশের সন্তানদের জন্য এ ভারী আবেগের কথা, চোখে পানি নিয়ে আসা গান। সাবিনা ইয়াসমিনের কন্ঠ যেন পুরো বাংলাদেশ তার সকল রূপ সৌন্দর্য নিয়ে চোখের সামনে উপস্থিত হয়েছে। আমরা যেন ফিরে গেছি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দেশ বাংলাদেশে।
এরপরে একে একে গাইলেন কিংবদন্তী সব গান। এক একটি গান অনুভূতির এক এক জায়গায় নাড়া দিয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি মন ছুঁয়ে গেছে বাংলাদেশ এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গাওয়া গানগুলো। সব কটা জানালা খুলে দাও না, আর রেললাইনের ধারে মেঠোপথটার পাড়ে দাঁড়িয়।
রেললাইনের ধারের সেই গানটি আমার মায়ের সবচেয়ে প্রিয় গান ছিল। প্রায়ই শুনতেন। সাবিনা ইয়াসমিন তাঁর খুব প্রিয় ছিল। মনে আছে সাবিনা ইয়াসমিন যখন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, মা সমস্ত রাত জেগে নামায পড়ে দোয়া করেছিলেন। এমন ভক্ত ছিলেন। তাই হয়ত মায়ের সেই স্মৃতিতেই সাবিনা ইয়াসমিনকে দেখার জন্য, তার গান শোনার জন্যে চলে গিয়েছিলাম আমাদের শহিদুল ইসলাম মিন্টু আয়োজিত অষ্টম বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালে। তিনি অত্যন্ত উদারতার সাথে নিমন্ত্রণপত্র পাঠিয়ে আমাকে সন্মানিত করেছেন।
এমন বিপুল পরিমাণ দর্শকের উপস্থিতি এবং প্রতিটা মানুষের মনে দাগ ফেলে যাওয়া এই বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালের সফলতা আবারও প্রমান করে ইচ্ছে করলে আমরা একসাথে কত অসাধ্য সাধান করতে পারে। এই ফেস্টিভ্যালে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের, কমিউনিটির উন্নয়নে যাদের অবদান রয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁদের এবং কমিউনিটির মুখ উজ্জ্বল করেছেন এমন কিছু মানুষদের। সাবিনা ইয়াসমিন ছাড়াও মঞ্চে নানা বিষয়ে দর্শকদের মনোরঞ্জন করেছেন দেশে থেকে আগত এবং স্থানীয় সকল গুনী শিল্পী। সকলেই অত্যন্ত সক্রিয় এবং সফলতার সাথে যার যার দায়িত্ব পালন করে গেছেন। বহু স্বেচ্ছাসেবকের দল কাজ করেছেন এই ফেস্টিভ্যালের নানা দিকে এবং সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাস্তবায়িত হয়েছে অষ্টম বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল।
এই অনুষ্ঠানের আরও বিশেষ একটি দিক হচ্ছে পরিচিত এবং প্রিয় সকল মানুষের সঙ্গে দেখা হওয়া। অনেকদিন পরে সবার সাথে দেখা হলো। অনেকের সাথে অনেক বছর পরে দেখা হয়েছে। কি যে ভালো লেগেছে।
সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এবং অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি নবম বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালের জন্য।
স্কারবোরো, কানাডা