
টেন্ডার ছাড়া খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মোটরসাইকেল গ্যারেজ ইজারা দিতে কক্ষে ঢুকে পরিচালককে গালাগাল ও হুমকির অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এসময় পছন্দের ব্যক্তিকে ইজারা পাইয়ে দিতে হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহসীন আলী ফরাজীকে হুমকি দিয়ে নগরীর সোনাডাঙ্গা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘১৬ বছর আওয়ামী লীগ পিটাইছি, আওয়ামী লীগের মতো করলে তোরও একই হাল করব।’
বৃহস্পতিবার (২২ মে) দুপুরে ২০ থেকে ২৫ জন বিএনপি নেতাকর্মী নিয়ে হাসপাতালের পরিচালককে এ হুমকি দেন আসাদুজ্জামান আসাদ।
এ সময় হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ এবং প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহসীন আলী ফরাজী নিজ কক্ষে অন্য চিকিৎসক কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা করছিলেন। এ সময় সোনাডাঙ্গা থানা বিএনপির নেতা পরিচয় দিয়ে কয়েকজন পরিচালকের কক্ষে প্রবেশ করেন। তারা যুবদল নেতা ফারুককে হাসপাতালের মোটরসাইকেল গ্যারেজ বরাদ্দ দিতে বলেন। এ সময় হাসপাতালের পরিচালক বলেন, মাত্র দুমাস আগে টেন্ডার হয়ে গেছে, না হলে অবশ্যই বিবেচনা করতেন।
পাশে জোরে মোবাইলে কথা বলতে থাকা সোনাডাঙ্গা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদকে উদ্দেশ করে পরিচালক বলেন, ‘একটু আস্তে কথা বলেন, না হলে কলটা কাটেন। আগে আমরা কথা শেষ করি।’ এতে উত্তেজিত হয়ে যান আসাদ। পরিচালককে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘১৬ বছর আওয়ামী লীগ পিটাইছি, আওয়ামী লীগের মতো করলে তোরও একই হাল করব।’ এ সময় পরিচালককে হাসপাতালের বাইরে বের হলে হামলার হুমকি দেন আসাদ ও তার অনুসারীরা। তাকে আওয়ামী লীগ আখ্যা দিয়ে ব্যাপক গালাগালও করা হয়।
জানা গেছে, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে মোটরসাইকেল গ্যারেজ রয়েছে। গ্যারেজটি ২০২২ সাল থেকে কোটেশন ইজারা নিয়ে পরিচালনা করে আসছেন নগরীর বয়রা এলাকার প্রতিষ্ঠান অন্তিকা এন্টারপ্রাইজ। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪-২৫ সালের জন্য গ্যারেজটি পরিচালনা করতে ওই প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি এক অফিস আদেশে বলা হয়, ২০২২ সালের গ্যারেজ ভাড়ার কোটেশন ও দরপত্র কমিটির সুপারিশের আলোকে ওই প্রতিষ্ঠানকে গ্যারেজ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। দেড় লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমাদানের নিমিত্তে ২০২৪-২৫ সেশনের বাকি সময়ের জন্য পুনঃকার্যাদেশ দেওয়া হয়।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহসীন আলী ফরাজী বলেন, আমি আমার কয়েকজন চিকিৎসক নিয়ে মিটিং করছিলাম। এ সময় সোনাডাঙ্গা থানা বিএনপির নেতা পরিচয় দিয়ে কয়েকজন আমার রুমে প্রবেশ করে মোটরসাইকেল গ্যারেজ ইজারা দেওয়ার বিষয়ে কথা বলেন। আমি তাদের বলেছি, কয়েক মাস আগে টেন্ডার হয়ে গেছে, তখন এলে হেল্প করতে পারতাম। আবার মেয়াদ শেষ না হলে হেল্প করা সম্ভব হবে না। এরপর একজন মোবাইল ফোনে উচ্চস্বরে কথা বলছিলেন। তখন আমি তাকে বলেছিলাম, ‘আমরা মিটিং করছিলাম, কথা শেষ করে আমার সঙ্গে কথা বলেন। না হলে একটু পাশে গিয়ে কথা বলেন। আমি অন্যদের সঙ্গে কথা শেষ করি।’ এতেই আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে গালাগাল করেন এবং বাইরে বের হলে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এ ঘটনায় আমি নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
অভিযোগের বিষয়ে সোনাডাঙ্গা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘আমি হাসপাতালে গিয়েছিলাম ১৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির এক কর্মীকে দেখার জন্য। সেখান থেকে পরিচালকের রুমে যাই ওই রোগীর ভালো চিকিৎসার কথা বলতে; কিন্তু তার অ্যাটিচিউট আমার ভালো লাগে নাই। তাকে হুমকি দেওয়া বা কোনো ধরনের ঘটনা ওখানে ঘটেনি। মোটরসাইকেল গ্যারেজ বা অন্য কোনো টেন্ডার নিয়ে ওখানে কোনো ধরনের কথা হয়নি।’