10.3 C
Toronto
রবিবার, মে ১৮, ২০২৫

দেশ চালায় আল্লায়! মধু খায় উল্লায়!

দেশ চালায় আল্লায়! মধু খায় উল্লায়! - the Bengali Times
গোলাম মাওলা রনি

চাণক্য বা কৌটিল্য নিয়ে কয়েক দিন ধরে সাধ্যমতো জানার চেষ্টা করছি। তাঁর অর্থশাস্ত্র, তাঁর বুদ্ধি পরামর্শ চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের একের পর এক সাফল্য এবং তাঁর শৈশবের নানা কাহিনি ইদানীং যেভাবে জানতে পারছি, তা ইন্টারনেট যুগের আগে সম্ভব ছিল না। একজন বিশ্ববিখ্যাত পণ্ডিত চাণক্যের অর্থশাস্ত্র সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে যখন জানালেন যে কিশোর বেলায় চাণক্যের পিতা-মাতা তাঁদের সন্তানের কয়েকটি দাঁত ভেঙে দিয়েছিলেন। কারণ চাণক্যের মুখে ৩২টি দাঁত ছিল আর সেই জমানায় অর্থাৎ আজ থেকে ২ হাজার ৪০০ বছর আগে কেরালাবাসীদের বিশ্বাস ছিল যে যাদের মুখে ৩২টি দাঁত রয়েছে তারা রাজা হবেই।

চাণক্যের পিতা-মাতা চাননি যে তাঁদের সন্তান রাজা হোক। কারণ রাজা হলে তাঁর মধ্যে মনুষ্যত্ব থাকবে না এবং সে তাঁর পিতা-মাতার চেয়ে রাজসিংহাসনকে বেশি প্রাধান্য দেবে। চাণক্যের নিয়তি তাঁকে এমন এক ঊর্ধ্বস্তরে পৌঁছে দিয়েছিল যেখানে জ্ঞান-বুদ্ধি-প্রজ্ঞা-কৌশল-সাহস-কূটনীতি এবং সৌভাগ্য একক হয়ে তৎকালীন দুনিয়ায় তাঁকে রাজসিংহাসনরাজা তৈরির কারিগর হিসেবে এমন মর্যাদায় ভূষিত করেছিল, যা আজও বিশ্ববাসীর জন্য বিস্ময় হয়ে আছে। তিনি যে বই রচনা করেছিলেন, তা মূলত রাষ্ট্রের মহাকালের সংবিধান। রাজার জন্য বাইবেল এবং জনগণের জন্য মুক্তির দলিল। তিনি তাঁর বইয়ের নাম অর্থশাস্ত্র রেখেছিলেন। কারণ রাষ্ট্রের প্রতিটি কর্মের সঙ্গে অর্থের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। রাষ্ট্র যা কিছু করে তার বিনিময়ে যদি সব পক্ষের অর্থাৎ রাষ্ট্র ও জনগণের অর্থ উপার্জন নিশ্চিত না হয় সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের পতন নিশ্চিত এবং রাজার মৃত্যু অনিবার্য।

- Advertisement -

চাণক্য রাষ্ট্রের অর্থ উপার্জনের আগে জনগণের অর্থ উপার্জনকে নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কথা বলেছেন। জনগণ অর্থ উপার্জন করবে এবং সেই অর্থে ব্যক্তিগত আরাম-আয়েশ, ভোগবিলাস ও কামনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার পরই রাষ্ট্রকে কর প্রদানে আগ্রহী হবে। জনগণের আর্থিক উন্নয়ন এবং আর্থিক দুরবস্থার কারণেই রাষ্ট্র যুদ্ধবিগ্রহ, বিশৃঙ্খলা, বিদ্রোহ, চুরি-ডাকাতি, রাহাজানি, ঠগবাজি ইত্যাদি শুরু হয়। এ কারণে চাণক্য জনগণের আর্থিক অবস্থা জানার জন্য এবং আর্থিক উন্নয়ন অথবা দুরবস্থাজনিত কারণে জনগণের ব্যবহার ও মেজাজমর্জি কীভাবে পরিবর্তন ঘটে, তা জানার জন্য রাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিভাগকে শক্তিশালী করার জন্য গুপ্তচরবৃত্তির ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেন। তিনি মৌর্য সাম্রাজ্যের গোয়েন্দা বিভাগকে মোট ৭৯টি দপ্তরে বিভক্ত করেন এবং প্রতিটি দপ্তরে সর্বোচ্চ বেতন-ভাতা-প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করেন।

মৌর্য সাম্রাজ্যের গোয়েন্দারা যে সফলতা দেখিয়েছিলেন, তা আজ অবধি সারা দুনিয়ার রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর জন্য সর্বাধিক অনুকরণীয়। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য, বিনুসার ও অশোকের জমানায় যে বৃহত্তর অখণ্ড ভারতভূমি রচিত হয়েছিল, তা আজ অবধি কেউ পারেননি। সেই সুবিশাল রাষ্ট্রের অজপাড়াগাঁয়ে হঠাৎ যদি কেউ ধনী হয়ে যেত, তবে তার ধনী হওয়ার কারণ-লাভক্ষতি ইত্যাদির প্রতিবেদন সরাসরি সম্রাটের কাছে পৌঁছে যেত। একইভাবে গ্রাম বা শহরের কোনো ধনী যদি হঠাৎ গরিব হয়ে যেত তবে কেন তিনি গরিব হলেন এবং তার ধন-নাশের ফলে ব্যক্তি পরিবার ও রাষ্ট্রের কী ক্ষতি হলো, তার বিস্তারিত প্রতিবেদনও রাজার কাছে পৌঁছে যেত এবং গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুসারে রাজা জরুরি ভিত্তিতে এমন ব্যবস্থা নিতেন যার ফলে ব্যবসা-বণিজ্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং সামাজিক সংহতিতে অনাসৃষ্টি অথবা অস্থিরতা তৈরি হতো না।

ইন্টারনেটে আমি যখন উল্লিখিত অর্থব্যবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করছিলাম এবং বারবার পুলকিত হচ্ছিলাম ঠিক সেই সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ফেসবুকে হাল আমলে নারায়ণগঞ্জের রিয়াদ নামক এক চাঁদাবাজের একটি অডিও কল ট্রেনডিং হচ্ছিল। সেখানে দেখাচ্ছিল, একটি রাজনৈতিক দলের পান্ডা পরিচয়ে চাঁদাবাজটি জনৈক ব্যবসায়ীকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল এবং ভয়ানক পাষণ্ডের মতো নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে তাঁকে হুমকি দিচ্ছিলেন। চাঁদাবাজ ব্যবসায়ীকে নির্দেশ দিচ্ছিলেন অনতিবিলম্বে সশরীরে তার সঙ্গে দেখা করে আত্মসমর্পণ করতে। অন্যথায় তাঁর গার্মেন্ট জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়া হবে। চাঁদাবাজটি আরও উল্লেখ করছিলেন, গত কয়েক দিনে যে কয়টি শিল্পকারখানায় আগুন লাগানো হয়েছে, তা তিনিই করেছেন, শুধু ওই সব প্রতিষ্ঠানের মালিকদের বেয়াদবির জন্য।

ইন্টারনেটে উল্লিখিত অডিও ক্লিপ শোনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলেজেন্স আমার সামনে একের পর এক চাঁদাবাজির নির্মম নিষ্ঠুর অডিও-ভিডিও ক্লিপ হাজির করতে থাকল। বরিশাল-পটুয়াখালী-চট্টগ্রাম-সিলেটসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল এবং ঢাকা মহানগরীর ছোট-বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি, ভাঙচুর এবং ব্যবসায়ীদের মারধরের যে দৃশ্য দেখছিলাম, তাতে করে চাণক্যের অর্থশাস্ত্রের জ্ঞান মাথা থেকে পেটের মধ্যে চলে এলো এবং পাকস্থলীতে কলেরার যন্ত্রণা শুরু করে দিল। একদিকে পেটের যন্ত্রণা অন্যদিকে রাষ্ট্রের অমানবিক আচরণ এবং জনগণের অসহায়ত্বের উপর্যুপরি বলাৎকার মনের ওপর কীভাবে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসল তার একটি বাস্তব উদাহরণ দিলেই বুঝতে পারবেন।

কয়েক দিন আগে আমার পরিচিত এক তরুণ ব্যবসায়ী হঠাৎ করে ফোন দিলেন। বললেন, ভাইয়া! আমি ব্যাংকক চলে এসেছি। ওরা আমাকে মেরেই ফেলত। কোনোমতে প্রাণ নিয়ে দেশ ছেড়ে এসেছি। তরুণ ভদ্রলোকের বাবা আওয়ামী লীগের ছয়-সাতবারের সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর তাঁর আসনে অন্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। ফলে দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা দলীয় রাজনীতি থেকে দূরে। অধিকন্তু তাঁদের পারিবারিক ব্যবসায় আওয়ামী লীগের অর্থদানবদের পালের গোদার কুনজর পড়ে। তিনি প্রথমে দখল করার চেষ্টা করেন। পরে ব্যর্থ হয়ে নিজের প্রভাব খাটিয়ে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং নিজ মালিকানাধীন ব্যাংকটিকে (যেখানে ওই তরুণের ব্যবস প্রতিষ্ঠানের ঋণ ছিল) লেলিয়ে দেন।

উল্লিখিত অবস্থায় তরুণ ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগের পতনের পর তরুণ ব্যবসায়ী ব্যাংকের সঙ্গে দেনদরবার করে একটি দফারফায় পৌঁছেন এবং নিজের শেষ সম্বল বিক্রি করে ব্যাংকঋণের রিশিডিউল করে পুনরায় ব্যবসা শুরুর চেষ্টায় যখন ব্যস্ত সময় পার করছিলেন, ঠিক তখন ঘটে অভাবনীয় এক দুর্ঘটনা। সেদিন রাত ৮টার দিকে ভদ্রলোক তাঁর ডাক্তার স্ত্রীকে কর্মস্থল পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে মহাখালী ফ্লাইওভার পার হচ্ছিলেন। এমন সময় ৩০-৩৫টি মোটরসাইকেল তাঁর গাড়ির গতিরোধ করে এবং তাঁকে বনানী থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তরুণ জানান, তাঁর বিরুদ্ধে তো কোনো মামলা নেই। চাঁদাবাজরা বলে, তাতে কী? আমরা আপনাকে থানায় বসিয়ে মামলা দেব এবং তারপর যা করার তাই করব।

তরুণ ব্যবসায়ী এবং তাঁর স্ত্রী প্রথমে ভড়কে গেলেন। তারপর কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন। তাঁদের অসহায় অবস্থা দেখে চাঁদাবাজরা ভারি মজা পেল। মহাখালী ফ্লাইওভারের মতো ব্যস্ত সড়কে শত শত গাড়ি যাওয়া-আসা করল কিন্তু কেউ একবার ফিরেও তাকাল না। গাড়ির জানালা-দরজা লক করে তরুণ বহু মানুষকে ফোন দিলেন। বিএনপি, জামায়াত-এনসিপি-উপদেষ্টাসহ বহু সরকারি বড় কর্তার দোহাই দিলেন। চাঁদাবাজরা সবাইকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিল। পরিস্থিতি এমন হলো যে চাঁদাবাজরা তখনই গাড়ি ভেঙে ফেলবে এবং তরুণ ও স্ত্রীকে কিডন্যাপ করবে। এ অবস্থায় তরুণ বললেন, ভাই! তোমরা তো টাকার জন্য এসব করছ। বল কত টাকা চাও। ওরা বলল, ৫০ লাখ। তরুণ বললেন, এত রাতে এত টাকা তো জোগাড় করা সম্ভব নয়। তোমরা আমাকে কোনো এটিএম বুথে নিয়ে চল। আপাতত আমার ক্রেডিট কার্ডে যত ব্যালেন্স আছে, তা তোমরা নাও। বাকিটা কয়েক দিনের মধ্যে পরিশোধ করব।

চাঁদাবাজরা তরুণ ব্যবসায়ীর বাসা-অফিস-গ্রামের বাড়ি সব কিছুর ঠিকানা জোগাড় করে তাঁকে টার্গেট বানিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরে গোয়েন্দা কায়দায় রেকি করছিল। সুতরাং সে যে পালাতে পারবে না, সে ব্যাপারে তারা নিশ্চিত ছিল। ফলে সে রাতে নগদ যা পাওয়া যায়, তা আদায় করার জন্য চাঁদাবাজরা তাঁকে একটি এটিএম বুথে নিয়ে যায়। অসহায় তরুণ বিনয়-ভদ্রতা-নম্রতা ও সততা দ্বারা চাঁদাবাজদের বিশ্বাস অর্জন করেন এবং তাঁর ক্রেডিট কার্ডের সমুদয় অর্থ উত্তোলন করে দুর্বৃত্তদের হাতে তুলে দিয়ে সে রাতের জন্য রক্ষা পেয়ে সোজা বিমানবন্দরে চলে যান এবং টিকিট কেটে এক কাপড়ে দেশ ত্যাগ করেন। তরুণের অনুপস্থিতিতে তাঁর প্রজেক্ট আবার অনিশ্চয়তায় পড়ে। রিশিডিউলের শর্তমোতাবেক ব্যাংক তাঁর কাছ থেকে যে চেক গ্রহণ করেছিল, তা ডিজওনার করিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতির মামলার প্রস্তুতি নেয়, এই অবস্থা জানানোর জন্য তরুণ ব্যবসায়ী যখন আমাকে ফোন করছিলেন তখন আমি ২ হাজার ৪০০ বছর আগেকার একজন সফল রাষ্ট্রনায়কের অর্থব্যবস্থা নিয়ে জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা চালাচ্ছিলাম।

আপনি যদি উল্লিখিত ঘটনার বাস্তব আরও অসংখ্য রূপ দেখতে চান তবে অফিসপাড়া, শিল্প-কলকারখানা, পাড়া-মহল্লা এবং ফুটপাতে ঢুঁ মারতে পারেন। রাস্তার মেথর, রিকশাচালক থেকে শুরু করে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী পরিবারের অন্দরমহলে ঢুঁ মারতে পারেন। আপনি সর্বত্রই একই হাহাকার শুনবেন। দারিদ্র্য-অনাহার এবং দুর্ভিক্ষের ভয় কীভাবে কোটি কোটি মানুষকে কাঁদাচ্ছে তা রাষ্ট্রের গোয়েন্দা, রাষ্ট্রের শাসক বা কর্তারা শুনতে না পেলেও আপনি কিন্তু ঠিকই শুনতে পাবেন এবং আপনি বুঝতে পারবেন যে দেশটি এখন আল্লায় চালাচ্ছে। অর্থাৎ বিশ্বজাহানের মালিক মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যেভাবে তাঁর প্রকৃতি পরিচালনা করেন, ঠিক সেভাবেই দেশ চলছে। প্রকৃতির আইনকে সময় উপযোগী এবং মানবকল্যাণে ব্যবহারের জন্য আল্লাহর খলিফারূপে শাসকদের যে দায়িত্ব ও কর্তব্য তা বর্তমান জমানায় যে পালিত হচ্ছে না, সেটা অনুধাবন করতে আপনার সামান্য কষ্ট হবে না। অধিকন্তু আপনি বুঝতে পারবেন আল্লাহ জঙ্গল-পাহাড়-সমুদ্রে কিংবা আকাশে তাঁর সৃষ্টিকুলের জন্য যে ভারসাম্য রক্ষা করে রিজিক বণ্টন করেন, তা সুযোগ পেলে মানুষ যেভাবে তছনছ করে, তার চেয়েও বেশি নির্মমতা নিয়ে চলমান বাংলার দুর্বৃত্ত-চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসী এবং মন্দ মানুষ ১৮ কোটি মানুষের রিজিক নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। পিঁপড়া-উল্লার মতো পতঙ্গরা যেভাবে মধুর খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরে এবং সদলবলে শুধু মধু নয় মেওয়ারও সর্বনাশ ঘটায় তদ্রুপ বর্তমানকালে মানুষরূপী দুর্বৃত্তরা সদলবলে সাধারণ মানুষের রিজিক লুট করে দেশ-জাতিকে সর্বনাশের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনীতি বিশ্লেষক

সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

 

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles