
হাতিরঝিল ব্রিজের উপর একটা ছেলেকে কাঁদতে দেখে আমি একটু থমকে দাঁড়ালাম। ঘড়িতে রাত দশটা বেজে তেরো মিনিট। কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি হয়েছে দেখে ব্রিজে তেমন লোকজন নেই। পাশ দিয়ে একটার পর একটা গাড়ি চলে যাচ্ছে।
একটা অজানা আশংকা আমাকে গ্রাস করলো। ইদানীং শুনেছি এই লেকে অনেকের মৃতদেহ পাওয়া যাচ্ছে। অনেকে এখানে এসে আত্মহত্যা করছে।
ছেলেটাকে দেখে মনে হচ্ছে মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। পরনে সাদা টিশার্ট এবং নেভি ব্লু জিন্সের প্যান্ট। বয়স বিশ থেকে বাইশের মধ্যে হবে।
আমি পাশে গিয়ে দাড়াতে মনে হলো ছেলেটা বিরক্ত হলো।
আমার দিকে তাকাতেই জিজ্ঞেস করলাম
কেমন আছো?
আমি কেমন আছি তা জেনে আপনার কি দরকার?
খসখসে কণ্ঠ। মারমুখী ভঙ্গি।
আমি কিছুক্ষণ চুপ হয়ে লেকের পানির দিকে তাকিয়ে থাকলাম।
পাশে দিয়ে একজন চা নিয়ে যাচ্ছে। তাকে ডাক দিয়ে এক কাপ চা দিতে বললাম। ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললাম
চা খাবে?
আপনি কিন্তু আমাকে খুব বিরক্ত করছেন?
দেখো আমি আসলে বিরক্ত করতে চাচ্ছি না। তোমাকে দেখে আমার ছোট ভাইয়ের কথা মনে পড়লো। ওর যখন মন খারাপ হতো ও তখন আমার সঙ্গে এসে গল্প করতো। গত বছর ও দেশের বাইরে চলে গেলো। তাই তোমাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মনে হলো যেন আমার ছোট ভাই দাঁড়িয়ে আছে।
এইবার ছেলেটাকে একটু উৎসাহিত মনে হলো
কিভাবে গিয়েছে বিদেশ?
স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে। পড়াশুনা করতে গিয়েছে কানাডাতে। চা নিবে?
না ইচ্ছে করছে না।
বৃষ্টির পর একটা ঠাণ্ডা আমেজ কাজ করছে কি বলো? তোমার নাম কি?
আমার নাম লিমন।
তুমি কি কাঁদছিলে?
ছেলেটা এইবার আমার দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেললো।
আমি তাকে পাশ থেকে জড়িয়ে ধরলাম।
কেঁদো না। জীবনেতো নানান কষ্ট থাকবেই। তাকে জয় করতে হয়। ভেঙ্গে পড়া কোন সমাধান না।
সে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।
হাতিরঝিলে কয়েকজন উৎসুক দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি তাদের দিকে তাকিয়ে বললাম।
তেমন কিছু না। আমার ছোট ভাই। মন খারাপ।
কেউ পাশ থেকে বলছে
ভাইয়া প্রেম কেস। এখনকার ছেলে পেলেরা ছেঁকা খেয়ে হাতিরঝিলে এসে কান্নাকাটি করে। আরেকজন বলছে দেখেন ড্রাগ টাগ খায় কিনা?
লিমন চলো এখানে উন্মুক্ত কিছু খাবার দোকান আছে। সেখানে গিয়ে শুনি তোমার কেন মন খারাপ।
২।
লিমনকে মোটামোটি জোর করে নিয়ে বসিয়েছি ব্রিজের কোনায় খাবারের দোকানে। দোকানদার এই রাতে কাস্টমার দেখে দৌড়ে এসেছে। বৃষ্টির জন্য আজ বেচা বিক্রি ভালো না। দুজনের জন্য দুটা জুসের অর্ডার দিলাম।
কোন মেয়েকে ভালোবেসে দুঃখ পেয়েছো?
ভালোবাসা বলে কিছু কি আছে? আমিতো তানিয়াকে ভালোবাসি। কিন্তু ও তো আমাকে ভালোবাসে না। বরং আমাকে ধোঁকা দিয়েছে। ওর কথা আমাকে অনেক বড় লোক হতে হবে। ক্ষমতাবান হতে হবে। তাকে অনেক গিফট করতে হবে। তাকে অনেক ভালো রাখতে হবে। কিন্তু আমি তা হতে পারছি না। তাকে অনেক গিফট করতে পারছি না।
লিমন তুমি কোথায় পড়ো? তোমার পরিবারে কে আছে?
আমি ইউনিভার্সিটিতে পড়ি। আমার বাবা একজন সরকারী চাকরিজীবী। আমরা দুই ভাই, এক বোন। আমার বাবা খুব বোকা একজন মানুষ। জীবনে কিছুই করতে পারেনি। খুব সৎ। আমরা কোনরকম চলি। আমাদের ফ্ল্যাট নেই, গাড়ি নেই। কিন্তু আমার বাবার কলিগদের কি সুন্দর বাসা, কি সুন্দর গাড়ি। বলেনতো এমন একজন বাবার ঘরে জন্ম হয়ে আমার কি লাভ হলো? সারাজীবন কষ্ট করছি। তানিয়া আমার সঙ্গে ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। তার জন্য কত ছেলে পাগল। তার একটাই কথা। সবচাইতে বড়লোক ছেলের সঙ্গেই সে প্রেম করবে। তাকেই বিয়ে করবে।
ওকে ছাড়া আমার কাছে পৃথিবীটা পানসে মনে হয়। আমরা দুজন বেশ ঘুরেছি। আমি ওকে বলেছি একদিন আমি অনেক বড়লোক হবো। আমার বি এম ডব্লিও হবে, গুলশানে ফ্ল্যাট হবে। ও আমার হাত ধরে বলেছে যে ও আমার সঙ্গে থাকবে। জানেন গত সপ্তাহে আমি জানতে পেরেছি ও আহমেদ এর সঙ্গে গাজীপুরে একটা রিসোর্টে গিয়েছিলো। আমি ওকে জিজ্ঞেস করেছি। ও আমাকে বলেছে যে আমি সারাক্ষণ স্বপ্নে থাকি। আহমেদের গাড়ি আছে, বাড়ি আছে। ও তার সঙ্গেই প্রেম করবে। আমি এই কথা শুনে ভেঙ্গে পড়েছি। জীবনটা কি শুধুই টাকা পয়সা। প্রেম, ভালোবাসা বলে কি কিছু নেই। আমি এই যে ইউনিভার্সিটি থেকে বের হবো। কি করবো ? কিভাবে আমার বি এম ডব্লিও হবে, কিভাবে আমার গুলশানে বাড়ি হবে? যে জীবনে তানিয়া নেই সেই জীবন রেখে কি লাভ? ওকে ছাড়া আমার কাছে জীবনের কোন মূল্য নেই।
আমি লিমনের হাত ধরলাম।
খুব বেশী ভালোবাসো ওকে?
হুম।
কেন এতো ভালোবাসো?
ও দেখতে অনেকটাই আলিয়া ভাটের মতো। এমন মিষ্টি মেয়ে আপনিও জীবনে দেখেন নি। আপনি ওকে দেখলে আপনিও প্রেমে পড়বেন।
তুমি এখনো বেশ ছোট। জীবন তুমি তেমন দেখনি। জীবনবোধের জায়গাটা তুমি এখনো জানো না লিমন। এই বয়সে কেউ এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে তানিয়া ছাড়া জীবন অর্থহীন?
অনুভূতি আবেগের জায়গাটাতো এমনি হবে। এতো ভেবে কি কেউ প্রেমে পড়ে? আর তানিয়াকে হারালে আসলে আমার কখনোই কাউকে ভালো লাগবে না। এমন মিষ্টি মেয়ে আপনিও দেখেন নি।
আমি লিমনকে বললাম
তুমি এই রাজধানী ঢাকাকে কতটুকু চেনো? তোমাকে আমি আজ রাতের ঢাকা শহর চেনাবো। তুমি নিশ্চয় মোবাইল বন্ধ করে রেখেছো। তোমার বাবা মা নিশ্চয় খুব দুশ্চিন্তায় আছে। প্রথমে তাদের ফোন করে বলো তুমি একজন বড় ভাইয়ের সঙ্গে আছো। নিরাপদে আছো। আজকে আসতে দেরী হবে।
৩।
আমরা দুজন গুলশানের একটা ফাইভ স্টারে ঢুকলাম। ফাইভ স্টারের শীতল পরিবেশ, চোখ ধাঁধানো ইন্টেরিয়র লিমন মুগ্ধ হয়ে দেখছে। তাকে নিয়ে গেলাম রুফ টপে। তখন সেখানে ডিনার চলছে।
কেউ কেউ মদ্য পান করছে। বেশ সুন্দরীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে।
একজনের সঙ্গে আমরা গল্প শুরু করলাম। তারপর লিমনকে তার সঙ্গে বসিয়ে দূরে গিয়ে আমি দুজনকে দেখছি।
লিমন বেশ গল্প করছে, হাসছে।
আমি ২২ তলার ছাদ থেকে তখন আকাশে পূর্ণিমা দেখছি। কি অদ্ভুত সুন্দর চাঁদ।
বেশ কিছুক্ষণ পর লিমনকে ডেকে আলাদা করে নিয়ে আসলাম।
কেমন লাগলো গল্প করতে?
বেশ লেগেছে। জানেন মেয়েটার আমার মতো দুঃখী। একটা ছেলেকে ভালোবেসে ধোঁকা খেয়েছে।
মেয়েটা কেমন সুন্দরী?
অপূর্ব সুন্দরী। আমি বুঝি না যে এমন সুন্দরী মেয়েকে কোন ছেলে কেন ধোঁকা দিবে। জানেন তানিয়াকে ভালো না বাসলে আমি ঠিক এই মেয়েটার প্রেমে পড়তাম।
লিমন এই ফাইভ স্টারের তুমি যেই মেয়েদের দেখছো এদের মধ্যে অনেকেই প্রফেশনাল। এদেরকে বাংলায় বারবনিতা কিংবা পতিতা বলে।
আবার অনেকেই প্রেমিকের সঙ্গে কিংবা হাজব্যন্ডের সঙ্গে এসেছে। তুমি খালি চোখে পার্থক্য বুঝবে না।
লিমন অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
হুম। বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। এখানে প্রফেশনাল যেই মেয়েদেরকে তুমি দেখছো তাদের মধ্যে অনেকেই অপরূপা সুন্দরী। সে ও হয়তো কোন একটা অবস্থানের শিকার হয়ে এখানে এসেছে। কিন্তু অবশ্যই তারা সুন্দরী এবং শুধু সৌন্দর্য না তারা কথা বার্তায় দারুণ স্মার্ট এবং অনেকের বেশ ভালো পড়াশুনাও আছে।
সত্যি বলছেন। এতো সুন্দর মেয়েগুলো প্রফেশনাল। বারবনিতা?
হুম। এটা পুরো পৃথিবীতেই একটি প্রতিষ্ঠিত প্রফেশন। কিন্তু আমাদের বুঝার ব্যাপারটা সেখানে না। আমাদের বুঝার ব্যাপারটা হচ্ছে সৌন্দর্যের কোন শেষ নেই। তুমি যেই মেয়েটাকে ভেবেছো পৃথিবীর সবচাইতে মিষ্টি মেয়ে তুমি এখানে হয়তো তার চাইতেও মিষ্টি মেয়ে পেয়েছো।
এরাতো বারবনিতা। এমন একটা মেয়ে বারবনিতা ভাবতেই আমার অবাক লাগছে। এতো কারো ঘরের বউ হতে পারতো। প্রেমিকা হতে পারতো।
দেখো প্রতিটি মানুষের একটি গল্প আছে। বিভিন্ন পরিস্থিতি আছে। সেটাতো আমরা জানি না। এর যে প্রেম কিংবা বিয়ে হবে না তাতো না। জীবনের কোন কিছুই নিশ্চিত না। তবে স্বাভাবিকভাবে বলা চলে এদের জীবনটা হয়তো এমনই যাবে। কিংবা হয়তো অন্যরকম কিছু হবে।
লিমন আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
তাকে বললাম চলো এইবার দেশের একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে তোমার পরিচয় করিয়ে দেই। তিনি আমার পরিচিত। বন্ধু। যদিও মনে হচ্ছে একটু টাল আছে। তবে তোমার অনেক প্রশ্নের উত্তর তিনি দিতে পারবেন। উনার বি এম ডব্লিও আছে, মার্সিডিজ আছে।
আমি রেহান ভাই এর সঙ্গে লিমনের পরিচয় করিয়ে দিলাম। বললাম
ভাই আমার ছোট ভাই। একটু আগে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলো। একটু জীবন-শিক্ষা দেন।
রেহান ভাই লিমনের দিকে তাকিয়ে বললো
ছোট ভাই খুব মহৎ কাজ করতে গেছো। এই চুতিয়া জীবন রেখে কোন লাভ নেই। উপর থেকে একটা লাফ দিয়ে শেষ করে দাও। আমিও কয়েকবার করতে চেয়েছি। শালা পারি নাই। সাহস হয় না।
কি বলছেন?
লিমন আঁতকে উঠে জিজ্ঞেস করে
আপনার না বি এম ডব্লিও আছে। মার্সিডিজ গাড়ি আছে।
হা হা। আরে চান্দু। আমার অনেক কিছু আছে। দুবাই তে বাড়ি আছে। গুলশানে ফ্ল্যাট আছে। কিন্তু আমার কত টাকা ঋণ আছে শুনবে?
কত?
আমার প্রায় হাজার কোটি টাকা ঋণ আছে। সবাই বলছে ভেগে যেতে দেশ থেকে। কিন্তু যেতে পারছি না। এই চুতিয়া দেশকে কেন জানি ভালো লাগে। মা আছে এখানে। বাবার কবর আছে। যেতে পারি না। মনে হয় আমার কবরও এখানে হবে। লোকজন তখন থুতু দিবে।
ব্যবসা করে ঋণের টাকা শোধ করবেন।
আরে ছোট ভাই এদেশে ব্যবসা করা যায় না। অমুক এসে বলবে এটা দেন, তমুক এসে বলবে ঐটা দেন। শ্রমিকরা বলবে আজকে ফ্যাক্টরি বন্ধ, অমুক প্রতিষ্ঠান এসে বলবে আজকে বিদ্যুৎ বন্ধ। বায়াররা বলবে মাল নিবে না। মাল ভাল না। ভাই এদেশের মানুষের ব্যবসা করার যোগ্যতা নাই। শুনো ছোট ভাই ইবনে বতুতা এই দেশের মানুষ দেখে কি বলে গিয়েছিলো জানো
বাংলাতে হামলা,যুদ্ধ-বিদ্রোহ লেগে থাকার কারণে উনি বাংলাকে ধন-সম্পদের পরিপূর্ণ জাহান্নাম বলে ডাকতেন।
নিজেকে এখন ইবনে বতুতা মনে হয়। আমিও ডাকি জাহান্নাম জাহান্নাম।
আমি লিমনকে বললাম রেহান ভাইকে ছাড়ো। উনি শান্তিতে পানীয় পান করুক। চলো এইবার তোমাকে নিয়ে যাই যিনি ঋণ নিয়ে ধনী হন নাই। তিনি হতে পারেন সরকারী চাকরিজীবী কিংবা হতে পারেন রাজনীতিবিদ। যিনি শুধুমাত্র ঘুষ নিয়ে আজ এই ফাইভ স্টারে। উনিও আমার বন্ধু।
আমজাদ ভাই আমাকে দেখেই হৈ হৈ করে উঠলেন। কি হে কবি। কয়েক পেগ চলবে নাকি?
আমি হেসে দিয়ে বললাম
না আমজাদ ভাই। এই ছেলেকে জীবন দেখাতে নিয়ে আসলাম। সে কিছুক্ষণ আগেও কেঁদে জীবন দিয়ে দিতে চাচ্ছিলো। অর্থ এবং ক্ষমতার জন্য।
আহা ছোট ভাই। এখনতো তুমি ছাত্র। তোমার জীবনের সবচাইতে শান্তির সময় কাটাচ্ছো। শুনো আমার টাকা পয়সা আছে। কিন্তু শান্তি নাই। ঘুমাতে পারি না। জীবনে মানুষ জনের কাছ থেকে যে কত টাকা নিয়েছি তার হিসেব নাই। আমাদের ক্ষমতা অনেকেটা নদীর স্রোতের মতো। মাঝে মাঝে মনে হয় আমি দেশের রাজা। যখন ক্ষমতা চলে যায়। আমার বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ, তদন্ত। তখন মনে হয় আমার মতো হতভাগা আর কেউ এই দেশে নাই। আজকে যে রাজা। কাল সে ফকির। বিদেশেও প্রচুর সম্পদ পাচার করছি। কিন্তু কি করবো বিদেশ গিয়ে। বসে বসে খাবো। রাজার ধনওতো একসময় ফুরিয়ে যায়।
লোকজন বুঝে ঘুষ খাইছি। হাসাহাসি করে। আমার নিজের ছেলে মেয়েও বুঝে। তারপর সারাজীবন ঘুষ খেতে খেতে পড়াশুনা ভুলে গেছি। বিদেশে গিয়ে যে কিছু করবো তার যোগ্যতাও নাই। নিজের ছেলে মেয়ের সঙ্গে ঝগড়া লাগলেও এরা অনেক সময় আড়ালে আবডালে বলে ঘুষখোর। আবার অনেক সময় মুখের সামনেই বলে দেয়। নিজের বউই বলে। বিদেশেতো সবাই স্বাধীন। করার কিছু নাই। কেউ কাউকে মানে না। মাঝে মাঝে মনে হয় কাদের জন্য ঘুষ খাইছি।
আমি লিমনকে নিয়ে নামছি। ছেলেটা চুপ করে আছে।
লিমন তুমি একটা জিনিস খেয়াল করেছো?
কি?
আজকে আকাশে পূর্ণিমা ছিলো। এরা সবাই ফাইভ স্টারে কি সুন্দর পরিবেশে বসে ছিলো। যেখান থেকে সবচাইতে সুন্দরভাবে পূর্ণিমা দেখা যায়। কেউ কিন্তু দেখছিলো না।
আমিওতো দেখিনি।
সেটাই বলছি। আমাদের চারপাশে কত মন ভালো করার জিনিস। অথচ আমরা দেখি না।
আপনি কি বলতে চান?
দেখো তোমার তানিয়াকে ভাল লাগে। সেটা ভালো। কিন্তু নিজেকে আগে যোগ্য করো। তানিয়ার জন্য জীবন দেয়ার কিছু নেই। একজন সুন্দরীকে দেখতে নিশ্চয় দারুণ লাগে। কিন্তু সঙ্গী হিসেবে আমরা চমৎকার মানুষকে বেছে নিতে চাই। যার সঙ্গে সময় কাটাতে ভালো লাগবে। যার সঙ্গে আমি সামনে এগিয়ে যাবো। মন খারাপ করে বসে থাকবো না। আমরা ভুল মানুষকে ভালোবাসি। আমরা এমন মানুষদের ভালোবাসি যাদের জন্য আমাদের মন খারাপ হয়। অথচ আমাদের জীবনের এই যাত্রায় এমন সঙ্গী দরকার যার সঙ্গে সময় কাটালে মন ভালো হবে।
কিন্তু আমার কি অর্থ, ক্ষমতা দরকার নেই?
হলেতো ভালো। কিন্তু তোমার অর্থ ক্ষমতা আছে কিন্তু তোমার মাঝে যদি জীবন না থাকে। আশেপাশের সৌন্দর্য দেখার সময় এবং অনুভূতি না থাকে। তাহলে এই অর্থেরতো কোন ব্যবহার নেই। তুমি এসিতে বসে রাতের ডিনার খাচ্ছো। কিন্তু ঘুম আসছে না। বিষণ্ণতায় চলে যাচ্ছ। সেই এসি, সেই খাবারতো কোন আনন্দ দিতে পারছে না।
তাহলে কি দরিদ্রতা ভালো?
সেটাতো বলিনি। তুমি তোমার যোগ্যতা অনুযায়ী বড় হবে। কিন্তু এই বড় হওয়ার প্রসেসে কিংবা বড় হওয়ার পরে তুমি আনন্দ এবং সুখী হতে ভুলবে না। যেই কাজ তোমাকে দুশ্চিন্তা দিবে সেই কাজ দিয়ে যদি অর্থ আসে, ক্ষমতা আসে তাতে কি লাভ বলো। জীবনের একমাত্র লক্ষ্য সুখী হওয়া এবং সুখ কি জিনিস সেটাকে উপলব্ধি করা। প্রকৃত সুখী মানুষদের আমরা হয়তো চিনি না। তাদেরকে আমাদের চিনতে হবে। তারা কিভাবে সুখী তা আমাদের জানতে হবে। তার চর্চা করতে হবে।
লিমন আমার সঙ্গে হাঁটছে তার বাড়ির পথে। আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ। নিচে আমরা দুজন। বৃষ্টির পরের শীতল বাতাস এখনো বইছে।