17.2 C
Toronto
শনিবার, মে ১৭, ২০২৫

সামাদ ভাই ও কাইয়ুম মোল্লার জন‍্যে শোকগাঁথা

সামাদ ভাই ও কাইয়ুম মোল্লার জন‍্যে শোকগাঁথা - the Bengali Times
১৯৯০ সালে আমার উপজেলা নির্বাচনের সময় দুজন ব‍্যক্তি চাকুরী করতেন গোয়ালন্দ সোনালী ব্যাংকে

গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান, আমাদের বন্ধু, প্রতিবেশী ও শ্রমজীবী মানুষের নেতা কাইয়ুম মোল্লা চলে গেলেন গত ২১শে এপ্রিল, আর ঠিক কদিন পরেই ৩০শে এপ্রিল আকস্মিকভাবে চলে গেলেন আমার প্রিয় সামাদ ভাই। দুজনের আকস্মিক বিদায়ে খুবই শোকাহত হয়েছি। কিছু লিখবো লিখবো করেও হাত চলছিলো না। এরমধ্যে কেউ কেউ অবাক হয়ে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলো কেন কিছু লিখছি না। দীর্ঘদিন যাবত প্রবাসে থাকলেও অনেকে আমার লেখা থেকে প্রথম সংবাদটা পান বলে জানিয়েছেন বহুবার। দীর্ঘ তিন দশকে অনেক প্রিয়জন হারিয়েছি। একসময় জনপ্রতিনিধি থাকার কারণে এক সময় অনেকের সাথে নিজের পরিবারের চেয়েও বেশী ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল। সেইসব প্রিয়জনের মৃত‍্যুর সংবাদে ইদানিং কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে থাকি বেশীরভাগ সময়। অনেক কথা, অনেক স্মৃতি মনের গহীনে এসে ভীড় করে। কোনটা রেখে কোনটা লিখবো ভেবে ভেবে লেখাই হয় না। দিন যায় মাস যায়, কারো কারো অনুযোগে সম্বিত ফিরে পাই।

১৯৯০ সালে আমার উপজেলা নির্বাচনের সময় দুজন ব‍্যক্তি চাকুরী করতেন গোয়ালন্দ সোনালী ব্যাংকে। সামাদ ভাই ও আইয়ুব ভাই। মানুষ কোন স্বার্থ ছাড়া মন থেকে ভালবেসে কিভাবে গ্রামে, অফিসে, চায়ের দোকানে নীরবে নিভৃতে কোন নির্বাচনী প্রার্থীর জন‍্যে সর্বাত্মক প্রচার চালাতে পারে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ সামাদ ভাই ও আইয়ুব ভাই। সামাদ ভাই পরে আমেরিকা প্রবাসী হয়েছিলেন। নিউজার্সীতে কয়েকবার গিয়েছি তার নিজের কেনা বাড়িতে। ২০১৯ সালে তার একমাত্র ছেলের বিয়েতে গিয়েছি। যতবার দেখা হয়েছে ততবারই মনে হয়েছে সেই নির্বাচনের সময়কার মতই প্রচন্ড ভালবাসেন তিনি আমাকে। প্রতিটি কথায়, ব্যবহারে, চোখের ভাষায় টের পেতাম। তিনি খুবই আন্তরিকভাবে চাইতেন আমি আবারও যেন নির্বাচন করি। সেই সামাদ ভাই আমেরিকায় থাকাকালীন দুরারোগ্য ব‍্যধিতে আক্রান্ত হন, খুব বড় সার্জারী হয় তার শরীরে, তবুও তিনি বেঁচে গেলেন মহান আল্লাহর দয়ায়। গত বছর অক্টোবরে সেই শরীর নিয়েও টরন্টো এলেন আমার ছেলে নাফিজের বিয়েতে। অথচ সামাদ ভাই বাংলাদেশে গিয়ে সামান‍্য এক্সিডেন্টে মারা গেলেন, কেমন যেন বিশ্বাসই হতে চায় না। কেন যে গেলেন দেশে, আর গেলেন যখন এতদিন থাকার কেন দরকার হলো এখনো মেনে নিতে পারি না!

- Advertisement -

কাইয়ুম মোল্লার সাথে আমি ছোটবেলা থেকে পাশাপাশি বড় হয়েছি। বয়সে দু বছরের সিনিয়র হলেও বন্ধুর মতই ছিল। রাজনীতি, মারামারি, ক্নাব করা, নির্বাচন করা, ফুটবল খেলা ইত‍্যদি নানা বিষয়ে হাজারো স্মৃতি। রাজনৈতিক জীবনের প্রথম দিকে কাইয়ুম বামপন্থী টিপু বিশ্বাসের গণফ্রন্ট, কৃষক সমিতি, ছাত্র মৈত্রী ইত‍্যাদির সাথে জড়িত ছিল, আর আমি ছিলাম জাসদ ছাত্রলীগের সাথে। রাজবাড়ী জেলায় তখন এই দুই দলের বিশাল প্রভাব ও দ্বন্দ ছিল। রাজনৈতিক মত পথ ও সামাজিক কাজকর্মে আমরা অনেকটা ভিন্ন মেরুর থাকলেও তার পরিবারের সাথে আমাদের সম্পর্ক ছিল গভীর। আমার উপজেলা নির্বাচনের সময় কাইয়ুম তার দলবল নিয়ে এসে শর্তসাপেক্ষে আমাকে সমর্থন দেয় যার কারণে আমি অত‍্যন্ত কৃতজ্ঞ। রাজনীতিতে কাইয়ুম ছিল শ্রমজীবী মেহনতী গরীব মানুষের খুবই কাছের মানুষ। অনেক অনিয়ম করে শারীরিক অসুস্থ‍্য ছিল অনেকদিন। কয়েক বছর আগে দেখতে গিয়েছিলাম তার বাসায়। অসুস্থ‍্য সত্তেও সেই মিষ্টি হাসি দিয়ে অনেক গল্প করলো। সেই মানুষটাও আমাদের ছেড়ে চলে গেল।

বিষন্ন মনে আমি মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, হে মা’বুদ, তুমি দয়াময়, আমার প্রিয় সামাদ ভাই ও কাইয়ুম মোল্লাকে মাগফেরাত দিও, জান্নাতবাসী করে দিও। তাদের জীবনের জানা অজানা সমস্ত গোণাহকে মাফ করে দিও। আমিন।

 

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -
পূর্ববর্তী খবর
পরবর্তী খবর

Related Articles

Latest Articles