24.9 C
Toronto
সোমবার, মে ১২, ২০২৫

আলোচিত সেই বাবা-মেয়েকে নিয়ে যা বলছেন কেয়ারটেকার

আলোচিত সেই বাবা-মেয়েকে নিয়ে যা বলছেন কেয়ারটেকার - the Bengali Times
ছবি সংগৃহীত

সাভারে বাবাকে খুন করে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ‘৯৯৯’-এ কল দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন মেয়ে। সাভার পৌর মজিদপুর কাঠালবাগান এলাকায় আব্দুল কাদের বাড়ির ৫ম তলায় গত বৃহস্পতিবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে। জাতীয় জরুরি সেবা নাম্বার ৯৯৯ কল করে নিহতের মেয়ে জানান, আমি আমার বাবাকে হত্যা করেছি, আমাকে ধরে নিয়ে যান। সাভার মডেল থানার ডিউটি অফিসার আব্দুর রশিদ জানান, ভোররাত ৪টার দিকে জাতীয় জরুরি সেবা নাম্বার ৯৯৯ কল করে এক মেয়ে জানান, তার বাবাকে তিনি কুপিয়ে হত্যা করেছেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত আব্দুর সাত্তারের লাশ উদ্ধার করে এবং মেয়েকে আটক করে।

ঘটে যাওয়া মেয়ে কতৃক বাবার হত্যাকাণ্ডের মর্মান্তিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত হয় ২০২৫ সালের মে মাসের শুরুতে। ভবনের কেয়ারটেকার জানান, তিনি বিকেল ৪টার দিকে একটি ফোন কল পান সাবলেটের মালিকের কাছ থেকে। তিনি বলেন, “উপরে পাঁচ তলার ১৪ নম্বর ফ্ল্যাটে কিছু সমস্যা হয়েছে। দরজা বন্ধ, ভেতরে কিছু একটা হয়েছে মনে হচ্ছে।” এরপর তিনি উপরে গিয়ে দেখেন, দরজা ভিতর থেকে বন্ধ এবং কেউ একজন জানাচ্ছেন, “দরজা এখন খোলা যাবে না, পুলিশ আসবে, তারপরই খোলা হবে।”

- Advertisement -

কেরাটেকার আরও জানান, তিনি বারবার দরজার সামনে উপস্থিত থাকলেও কেউ দরজা খুলতে রাজি হননি। রাত ১:৩০-এর দিকে পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে। পুলিশ ভেতরে ঢুকে দেখে, একজন নারী মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন, সঙ্গে ছিল তিনজন নারী—এক কিশোরী ও দুজন তরুণী, যাদের পুলিশ হেফাজতে নেয়।

পুলিশি তদন্তে জানা যায়, মৃত তরুণীর নাম শেফা। তিনি আব্দুস সাত্তারের দ্বিতীয় স্ত্রীর মেয়ে। ২০১৯ সালে সাত্তার ওই নারীকে বিয়ে করেন। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকেই সাত্তার শেফার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। ২০২২ সালে নাটোরে এক ধর্ষণ মামলাও দায়ের করেন শেফা। পাল্টা হিসেবে আব্দুস সাত্তার শেফার বিরুদ্ধে একটি চুরির মামলা করেন।

এই জটিল পারিবারিক সম্পর্কের মধ্যে দিয়ে চলতে থাকা অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের পরিণতি ঘটে ভয়াবহ এক হত্যাকাণ্ডে। আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে আব্দুস সাত্তার নিজের দোষ স্বীকার করেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি আরও একটি ঘটনায় নাম জড়িয়েছে সাত্তারের নিজের মেয়ে জান্নাত জাহানের। জানা যায়, তিনি এখন আরেকটি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে আছেন, এবং তদন্তে নতুন করে উঠে আসছে তার সংশ্লিষ্টতা।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয় বিভিন্ন আলামত এবং ওই ফ্ল্যাটে থাকা কিশোরী ও তরুণীদের পরিচয় নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। ভবনের অন্যান্য বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, দীর্ঘদিন ধরেই ওই ফ্ল্যাটে নানা অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করা যেত, কিন্তু কেউ সরাসরি কিছু বলার সাহস পায়নি।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভবনের তালা ভেঙে ভেতরে তল্লাশি চালানো হয়, এবং এর পর থেকে আলোচিত বাবা-মেয়েসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আর কেউ ঐ ফ্ল্যাটে দেখেনি।

বিশ্লেষণ ও সামাজিক বার্তা:এই ঘটনাটি আমাদের সমাজে গৃহভিত্তিক নির্যাতন ও পারিবারিক অপরাধের এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে। যেখানে নিকটাত্মীয়রাই হয়ে উঠছেন হিংস্র, নির্মম ও অপরাধপ্রবণ। প্রয়োজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সমাজ ও পরিবারের সচেতনতা, যেন এ ধরনের ভয়াবহ ঘটনা আগেভাগেই থামিয়ে দেওয়া যায়।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles