14.7 C
Toronto
শুক্রবার, মে ৯, ২০২৫

আমার বাবা

আমার বাবা - the Bengali Times
বাবা তুমি কী যে একজন সৌখিন মানুষ ছিলে এখন যখন ভাবি অবাক হই

বাবাকে বড় বেশি মনে পড়ে। নানা কাজের ব্যস্ততায় সব সময় মনে পড়ে বললে ভুল বলা হবে। কিন্তু যখন মনে পড়ে তখন বুকের ভেতর একটা কষ্টের ঢেউ তোলপার করে। বিড়বিড় করে বলি, বাবা তুমি কেমন আছো? তুমি যেখানে আছো সে জায়গাটা কেমন? তোমার সব বন্ধুদের সাথে, ভাই-বোনদের সাথে দেখা হয় তোমার? আগে স্বপ্নে এসে বাবা আমার কথাগুলোর জবাব দিতেন। বলতেন, ভালো আছি, বাতাসে ঘুরে বেড়াই, কোনো চিন্তাভাবনা নেই, ভালোই লাগে। আরো কত প্রশ্ন থাকতো আমার বাবার কাছে। বাবা সব কথার জবাব দিতেন। এখন আর বাবা আমার স্বপ্নে আসে না। কেন আসো না বাবা? তুমি কি রাগ করেছো আমার উপর?

বাবা তুমি কী যে একজন সৌখিন মানুষ ছিলে, এখন যখন ভাবি অবাক হই। পৃথিবীতে এমন কোনো রঙের গোলাপ নেই যা দিয়ে তুমি বাগানটিকে সাজাওনি। আরো কত কত ফুল। সে ফুলে সুবাসে বিকেলের সিগ্ধ হাওয়ায় মৌ মৌ করতো সারা বাড়িটি। সিঁড়ির দুপাশে লাগানো কামিনী ফুলের গন্ধে সারা মনটা ভরে যেতো। বর্ষার বৃষ্টির সাথে দোলনচাঁপা দোল খেতো। রজনীগন্ধা, হাসনাহেনা, গন্ধরাজ কোন গাছটি না ছিল আমাদের বাগানে। জুঁই গাছ তার একরাশ ফুল নিয়ে ছাদ পর্যন্ত বেয়ে উঠে ফুল ছড়িয়ে দিতো পুরো ছাদটিতে। আর সে ফুলের পাশে বসে চলতো বিকেল বেলা আমাদের পাড়ার বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা। আর বাড়ির পেছনের বাগানে এমন কোনো ফল নেই তুমি রোপন করোনি। একজন মালি সারাদিন ধরে বাগানের কাজ করে যেতো।

- Advertisement -

একজন ভীষণ আধুনিক মানুষ ছিলে তুমি বাবা। বাড়িতে গানের মাস্টার, নাচের মাস্টার, পড়ার মাস্টার, এবং আমাদের অপছন্দের মৌলবী সাহেবও আসতেন। (যদিও সেটা ছিল আম্মার ডিপার্টমেন্ট)। তুমি নিজে আমাদের আবৃত্তি করা শেখাতে। কী যে ভালো আবৃত্তি করতে তুমি-সেটা এখনো কানে লেগে আছে। তুমি এত শিল্পীমনা ছিলে যে, চেষ্টা করেছিলে আমাদের শিল্পী বানাতে কিন্তু তোমার অবাধ্য সন্তানরা কেউই কোনো বড় শিল্পী হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেনি।

বাবা একটা কথা কিন্তু তোমাকে আমার বলতেই হবে। যেটা আগে কখনো বলা হয়নি। আচ্ছা বলো তো বাবা তুমি কেন আমাদের সকালে ঘুমোতে দিতে না? মার্নিংওয়াক সেরে ঘরে এসেই আমাদের ঘরের জানালাগুলো খুলে দিতে ঠাসঠাস করে। ফ্যান বন্ধ করে দিতে, মশারী খুলে দিতে, যেন আমরা কিছুতেই ঘুমাতে না পারি। তখন কি মনে হতো জান বাবা? মনে হতো তুমি পৃথিবীর সবচাইতে নিষ্ঠুর বাবা। কিন্তু বড় হয়ে বুঝতে পেরেছি, তুমি ছিলে আমাদের শ্রেষ্ঠ বাবা। এমন বাবা সব সন্তানদের ভাগ্যে জোটে না। তুমি আমাদের তাস খেলা, দাবা খেলা. ব্যাডমিন্টন খেলা, সাঁতার কাটা সবকিছু শিখিয়েছো।

বাবা তুমি যখন চলে গেলে তখন আমার মনে হতো, তুমি যেন আমার পাশে হাঁটছো। আমার পাশে তুমি বসে আছো। আমি অনুভব করতাম কেউ যেন একজন আছে আমার পাশে। পিঠে হাত দিয়ে তুমি আমার ঘুম ভাঙাতে। তুমি আমি কত গল্প করতাম স্বপ্নের মাঝে।

কত সুন্দর করে নিজের মনের মতো করে বিশাল বাড়ি বানিয়েছিলে তুমি। আমরা সব ভাই-বোনরা তো সে বাড়িতেই বেড়ে উঠেছি। তোমার বড় আদরের মেয়ে ছিলাম আমি। আদর করে তুমি আমাকে একটা বিশেষ নামে ডাকতে। সেটা ছিল শুধু তোমার ডাক। বাবা তুমি কি ওপার থেকে সবকিছু দেখতে পাও? তবে সবকিছু না দেখতে পাওয়াই ভালো। দেখতে পেলে অনেক কষ্ট পাবে। না না আমাদের বাড়ির কিছু হয়নি। সেটা সে রকমই আছে। শুধু নেই সেই ফুলের সুবাস। ফলের বাগানটাও নির্জীব। তুমি বারান্দাতে যে চেয়ারটাতে আরাম করে বসতে, সেটা সেখানেই আছে। ভোগনভ্যালিয়া ছড়িয়ে আছে আগের মতোই বারান্দার গ্রিলে লাল রং নিয়ে। বাড়িটির প্রতিটি কোণে এখনো তুমি আছো।

বাবা তোমাকে অনেক মনে পড়ে। তোমার কথা মনে হলে আমার মনে হয়, আমার পৃথিবীটা থমকে গেছে। আমার চোখ জলে ঝাপসা হয়ে যায়। আর সে ঝাপসা চোখে আমি দেখতে পাই, তুমি হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছো আমার সামনে।

বাবা তোমার পৃথিবীটা কেমন? তুমি যেখানে আছো সেখানে কি অনেক আপনজনরাও আছে? বড্ড জানতে ইচ্ছে করে সবকিছু। বাবা তুমি কিন্তু আমার স্বপ্নে এসে জাগিয়ে তোলো আমাকে। আমার এ অনুরোধটুকু তুমি রেখো বাবা। ভালো থাকো বাবা। অনেক অনেক ভালো।

ম্যাল্টন, কানাডা

- Advertisement -
পূর্ববর্তী খবর
পরবর্তী খবর

Related Articles

Latest Articles