8 C
Toronto
শনিবার, মে ৩, ২০২৫

র‍্যাবিটের শীতের কষ্ট ও আমার স্প্রিং এর দুঃখবোধ

র‍্যাবিটের শীতের কষ্ট ও আমার স্প্রিং এর দুঃখবোধ - the Bengali Times
র‍্যাবিট ঘাস লতাপাতা এবং পছন্দের গাছের বাকল খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আমা

র‍্যাবিট ঘাস লতাপাতা এবং পছন্দের গাছের বাকল খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। আমাদের ফ্রন্ট এবং ব‍্যাকইয়ার্ডে র‍্যাবিটের আনাগোনা বেশ। সামারে ওরা যখন লনের কচি ঘাসের ডগা মজা করে খায়, দুর থেকে আমরা তা দেখে আনন্দ পাই। ওদের পছন্দের খাবার কলমি আর পালং শাক। এদুটি শাক যখন সবজি বাগানে একটু একটু করে বেড়ে ওঠে, ওরা তা মজা করে খেয়ে একদম সাবাড় করে ফেলে। ওদের খাওয়ার আনন্দে আমরা বাগান থেকে কলমি আর পালং শাকের স্বাদ থেকে দুরে থাকি। লাল শাক, পুঁই শাক আর সুইসচার্ট ওরা খায় না বলে আমরা তা খেতে করতে পারি।

শীতের সময়টা র‍্যাবিটের বেশ কষ্টে কাটে। সেসময় ঘাস, গাছের লতাপাতা কিচ্ছু থাকে থাকে। এসময় ওরা গর্ত করে কোনমতে বেঁচে থাকে কিন্তু তাদের তো খাবারের প্রয়োজন হয়। মাঝে মাঝে গর্ত থেকে বের হয়ে গাছের বাকল খোঁজে। পছন্দের খাবার না হলেও এটা তারা কষ্ট করে খেয়ে বেঁচে থাকে। এবার তাদের এই কষ্টে বেঁচে থাকার সাথে যোগ হয়েছে আমার কষ্ট। আমার সেই কষ্টের কথাটাই এখন বলি-

- Advertisement -

র‍্যাবিটের শীতের কষ্ট ও আমার স্প্রিং এর দুঃখবোধ - the Bengali Times

বাগান যাঁরা করেন তারা সকলেই জানেন- সন্তানের মতো যত্ন নিয়ে প্রতিটি গাছ বড় করতে হয়। সন্তানের সাথে যেমন আত্মার সম্পর্ক গড়ে ওঠে, বাগানের প্রতিটি গাছের সাথেও সম্পর্ক তেমনি। দৈব দুর্বিপাকে কোন গাছ মারা গেলে তার কষ্ট এসে লাগে মনে।

আমাদের বাগানের বয়স সাত বছর। এই সাত বছরে বেশ কিছু পছন্দের গাছ যত্ন নিয়ে বড় করেছি। এসব গাছের পিছনে আছে অনেক অর্থের সংশ্লিষ্টতা। জাপানিজ ম‍্যাপল লিফ গাছটির কথাই ধরি। দুই তিন ফুটের একটা স্বাস্থ্যবান গাছ নার্সারি থেকে কিনতে গেলে ২-৩ শ ডলারের প্রয়োজন হয়। বছর চারেক আগে এর একটি ছোট গাছ কিনেছিলাম ১৭০ ডলার দিয়ে। এই চার বছরে অনেক যত্ন নিয়ে বড় করেছি। প্রাইম লোকেশনে গাছটি প্রায় পাঁচ ফুট, দেখতে ঝোপালো। সামারে এর রক্তরং পাতার দিক তাকালে মন ভরে যায়। একটা রক্তরং ক্লাইম্বিং রোজ দেখেছিলাম ইন্টারনেটে। অনেক খোঁজা খুঁজি করে এর একটি গাছ সংগ্রহ করে রোপন করেছিলাম ফ্রন্ট ইয়ার্ডের দেয়াল ঘেসে। দুই বছরে এটি উঠি গিয়েছিল দোতলার জানালার কাছে। সামারে বেড রুমের জানালা দিয়ে তাকালে চোখে পড়তো গাছভর্তি অজস্র রক্তগোলাপ। ছয় বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে একটি কোরিয়ান লাইলাক গাছকে দুই ফুট উঁচু বনসাই এ রুপ দিয়েছিলাম। ছোট আকৃতির রসালো প্লাম ফল আমাদের সবার পছন্দ। সেল্ফ পলিনেটেড নয় বিধায় দুই ধরণের ম‍্যানহাইট উচ্চতার দুটি প্লাম গাছ গতবছর নার্সারি থেকে কিনে রোপন করেছিলাম। খরচ হয়েছিল ১৮০ ডলার। ভেবেছিলাম এবারই ফল আসবে তাতে।

র‍্যাবিটের শীতের কষ্ট ও আমার স্প্রিং এর দুঃখবোধ - the Bengali Times

এবার শীতে পছন্দের এই গাছগুলোর ক্ষতি করেছে র‍্যাবিট। শীতে খাদ‍্যের খোঁজে গর্ত থেকে বের হয়ে কিছু না পেয়ে আমার এ পছন্দের গাছগুলোর গোড়ার এক থেকে দুই ফুট উপরে চতুর্দিকের বাকল খেয়ে ফেলেছে। এখন আমি যখন এগুলোর পাতা ফুলের জন‍্য অপেক্ষা করছি তখন তার দেখা পাচ্ছি না। গতকাল ভালভাবে পরীক্ষা করে দেখলাম গাছগুলোর উপরের অংশ মরে যাচ্ছে।

স্প্রিং এর শুরুতে আবহাওয়া যখন স্বাভাবিক হতে শুরু করে তখন গাছের শিকড় মাটি থেকে পানি আর খাদ‍্যোপাদান সংগ্রহ করে বাকলের মাঝ‍্যমে গাছের শাখা প্রশাখায় প্রেরণ করে। সেই পানি ও খাদ‍্যোপাদান পেয়ে গাছ পাতা ফুল উৎপন্ন করে। প্রকৃতিকে সবুজ করে তোলে। মাঝপথে গাছের বাকল না থাকায় পানি ও খাদ‍্যোপাদান উপরে যেতে পারে না ফলে গাছের উপরের অংশ শুকিয়ে যায়। আমার এ শখের গাছগুলোর উপরের অংশ এ কারনেই শুকিয়ে যাচ্ছে। তবে আশার কথা এর গোড়া থেকে নতুন শাখা প্রশাখা বের হচ্ছে। যদি মরে না যায় এগুলোকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আমাকে আবার ৫/৬ বছর অপেক্ষা করতে হবে। আমার দুঃখটা আসলে এখানেই।

 

গুয়েল্ফ, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles