
প্রথমত অভিনন্দন জানাই সকলকে যারা মার্ক কার্নির নেতৃত্বে চতুর্থবারের মত লিবারেল পার্টির এই বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন। একটা ডুবন্ত জাহাজকে তীরে ভিড়িয়েছেন মার্ক কার্নি। এ বিষয়ে পরে লিখবো। কয়েক পর্বে কানাডার নির্বাচনকে নিয়ে লেখার প্রথম পর্ব আজ বাংলাদেশী প্রার্থীকে নিয়ে।
টরন্টোর স্কারবরো সাউথ ওয়েস্ট থেকে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত একমাত্র প্রার্থী কনজারভেটিভ পার্টির ডাক্তার তরুণ ১৬৫৫৪ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী লিবারেল পার্টির হেভিওয়েট প্রার্থী বিল ব্লেয়ারের প্রাপ্ত ভোট ৩২৯০৯। আমি মনে করি ফেডারেল নির্বাচনে সবসময়ই পার্টির জোয়ার ও পার্টির নেতার জনপ্রিয়তার উপর রেজাল্ট নির্ভর করে। সেই তুলনায় ডাঃ তরুণ ভাল ফল করেছেন। তবে অধিকাংশ বাংলাদেশীকে তিনি তার নির্বাচনী কাজে এনগেইজ করতে পারেন নি অথবা চেষ্টা করেন নি। অনেক বাংলাদেশীই চিরাচরিত স্বভাব অনুযায়ী ডাবল রোল প্লে করেছেন। অর্থাৎ দুদিকেই তাল দিয়েছেন। আর কেউ কেউ শুধুমাত্র ফটো সেশন করে কেটে পড়েছেন। ফটো সেশন এবং অর্থবহ নির্বাচনী ক্যাম্পেইন এক জিনিস নয়। আর তাছাড়া প্রার্থী হিসেবে ডাঃ তরুণের নিজস্ব কিছু দুর্বলতাতো ছিলই। তবুও আমি মনে করি তিনি প্রথাগত রাজনীতিবিদ না হলেও এবং কিছু আনুষাংগিক দুর্বলতা সত্তেও অনেকের চেয়ে ভাল প্রার্থী ছিলেন তিনি। আশা করি রাজনীতিতে লেগে থাকবেন, তার দুর্বলতাগুলো নিয়ে তিনি নিজস্ব শুভাকাংখি দিয়ে রিসার্চ করবেন এবং আগামীতে আবারও চেষ্টা করবেন। সর্বোপরি কমুনিটির কাজে নিজেকে আরো বেশী নিয়োজিত রাখবেন। কনজারভেটিভ পার্টির নীতি আদর্শকে আমি পছন্দ করি না। আমি তাঁর এলাকার ভোটারও না। আমাদের নব নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির ভাষায় বলতে হয়, আফটার অল উই অল লাভ আওয়ার কান্ট্রি। সেজন্যেই কথাগুলো বলা।
দিন যতই যাচ্ছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নানান ঝামেলাপূর্ণ বিষয়ে নিজেদেরকে জড়িয়ে ফেলছেন যা কাম্য নয়। যখনই দেশে একটা অস্বাভাবিক সরকার এসেছে মানুষ আশায় বুক বেঁধেছে যে এরা এমন কিছু করবে যা গনতন্ত্রের রেলচ্যুত ট্রেন আবার লাইনে পুনর্স্হাপন করবে। ১/১১ এর সরকারের কাছেও মানুষ এমন আশা করেছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা রণে ভংগ দিয়ে কোনমতে দায়সারা কাজ করে চলে গেছে, মানুষ আশাহত হয়েছে। এবারও ড. ইউনুসের সরকারের কাছে মানুষের আশা একটাই ছিল যে দৈনন্দিনের রুটিন কাজ ছাড়া তাদের মুল কাজ হবে কমপক্ষে আগামী একশত বছরের টেকসই গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েমের পথ প্রশস্ত করতে কিছু প্রয়োজনীয় সংস্কার করে তারা নির্বাচন দিয়ে বিদায় নিবে। কিন্তু সেই মুল কাজটা বাদ দিয়ে তারা বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ ও বিতর্কিত কাজ ও কথাবার্তা বলছেন যা সফল হলে ভাল তবে ব্যর্থ হলে আম ছালা দুইই যাবে। আমি যতটুকু বুঝতে পারি তা হলো তাদের রাজনৈতিক ক্রেডিট বা সস্তা বাহবা নেবার জন্যে কোন কথা বলা বা কাজ করা উচিত নয়। কিন্তু তারা সেগুলো করছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক দলগুলো সন্দেহ করছে। প্রতীয়মান হয় যে তারা একটা নুতন দলকে প্রতিষ্ঠিত করতেও কিছু সাহায্য সহযোগিতা করছেন। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে বিমসটেক সম্মেলনে কিছু বললেন যা এখন বুমেরাং হয়ে ফিরে আসছে। এখন আবার করিডোর দেবার বিষয় নিয়ে চলছে বড় বিতর্ক।
দয়া করে এসব ছাড়ুন। সংস্কারের কাজগুলোর অগ্রগতি কী? সংস্কার বিহীন নির্বাচন হলে অতীতের সকল রক্তপাত বৃথা যাবে। কাজেই আবার বলি, সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দিয়ে চলে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। অন্যথায় অনেক কিছুর দায়ভার নিতে বাধ্য হবেন যা আপনাদের জন্যে সহনীয় বা বহনীয় মুশকিল হবে আবার শোভনীয়ও হবে না। পৃথিবীতে কেউই অমর নয়। কাজের মধ্য দিয়ে ড. ইউনুস মানুষের কাছে স্মরনীয় থাকুক এটাই ভাল কামনা হবে।
স্কারবোরো, কানাডা