7.4 C
Toronto
মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৫

স্কাইল্যান্ড সুপারমার্কেটে

স্কাইল্যান্ড সুপারমার্কেটে - the Bengali Times
আমরা স্কাইল্যান্ড সুপারমার্কেটে ঢুকলাম দাওয়াতে হাতে করে কিছু নিয়ে যাবার জন্য

আমরা স্কাইল্যান্ড সুপারমার্কেটে ঢুকলাম দাওয়াতে হাতে করে কিছু নিয়ে যাবার জন্য। কোনো ফলমূলই আমার বন্ধুর পছন্দ হচ্ছিল না। সে চাচ্ছিল এক্সেপশনাল কিছু নিতে। বিরাট সাইজের কাঁঠাল দেখিয়ে বললাম- দোস্ত, এটা নি? সাইজ দেখ!

চিশতী কাঁঠালের মাথা, ঘাড়, পেট, পিঠ, পেছন টিপে টিপে দেখে বলল- পাকাই তো

- Advertisement -

– বাঙালিরা আসবে, শিয়ালের মতো কাঁঠালের ওপর ঝাপায়ে পড়বে!

– আইডিয়া অবশ্য খারাপ না, নিতে পারবি?

– অফকোর্স!

– শিয়াল কি আসলেই কাঁঠাল খায়?

– খায় মানে, পাগলের মতো! পাকা কাঁঠাল গাছ থেকে  পড়ে গেলে শিয়ালের ঈদ লাগে। আর দোস্ত, শিয়াল খুব সুন্দর করে কাঁঠাল খায়, বিচিটা ফেলে দেয়

– তোর এইসব হাবিজাবি আজাইরা জ্ঞান খুব বেশি!

সে টু নাইন্টি নাইন পাউন্ড করে ছাড়ে কাঁঠাল কিনলো। পঁচিশ কেজি ওজোনের কাঁঠালটার দাম পড়লো একশ পয়ষট্টি ডলার। ওর কাছে অবশ্য এটা কোনো টাকাই না। শুধু মিষ্টিই কিনলো একশো ডলারের।

জাতীয় ফলটা সে আমার কাঁধে তুলে দিলো। বন্ধুর হাতে মিষ্টি। সে কিছুক্ষন পরপর বলছে- রিপন তোর কষ্ট হচ্ছে না তো?..

আমরা যাচ্ছি ইফতার পার্টিতে; এক খালা ইফতারের দাওয়াত দিয়ে বলেছিল পারলে যেন আমার বন্ধুকেও সাথে নিয়ে যাই। উনি চিশতীর মহা ভক্ত। উনার কথা হলো, সবসময় নিজের স্বার্থ আগে দেখা উচিত। স্বার্থপর না হলে নাকি বর্তমান সমাজে বাঁচা যায় না। তাই চিশতীর কাজ তার খুব পছন্দ। বন্ধু প্রথমে রাজি ছিলো না। যখন বললাম তেহারি, বোরহানি আর হাতে বানানো হালিম খাওয়াবে, তোর খিব ভক্ত; তখন আর দেরি করেনি।

টরন্টোতে ইফতার আজ সন্ধ্যা সাতটা বিয়াল্লিশে। আমরা সাড়ে পাঁচটায় বের হলাম। ঠিক ইফতারির সময় উপস্থিত হওয়াটা খুব খারাপ দেখায়।

আমার অবশ্য তেমন কষ্ট হচ্ছে না, ভারি ওজন ঘাড়ে  নিয়ে চলার আমার বিরাট সুনাম আছে। শুধু কাঁটাগুলো ঘাড়ে চেপে বসায় একটু জ্বালাপোড়া করছে। বারবার কাঁধ চেঞ্জ করে সাময়িক রেহাই পাচ্ছিলাম। মাঝেমধ্যে মাথায়ও নিচ্ছি। ভাগ্য ভালো ক্যাপ পরে এসেছিলাম।

ঠিক ছয়টা পয়তাল্লিশে ড্যানফোর্থ এভিনিউ এর একটা সরকারি বিল্ডিং এ থামলাম। পার্কিং লট থেকে পাক্কা আড়াইশো মিটার ফলটা কাঁধে নিয়ে পৌঁছুলাম ষোলোশো সাত নাম্বার ইউনিটে। কড়া নাড়তেই খুলে গেলো দরজা। এক চাইনিজ বের হয়ে চিং-চুং করে কি জিজ্ঞেস করলো কিছুই বুঝলাম না। তারপর সশব্দে দরজা বন্ধ করে দিলো চোখের সামনে।

আমার বন্ধু বলল- এই তোর খালা?

– খালাতো ওরকম না?

– ডবল চেক কর তো এড্রেস?

মোবাইল খুলে দেখে বললাম- হা দোস্ত, এটাই।

সে আমার হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে চেক করে বলল- ড্যানফোর্থ রোড আর ড্যানফোর্থ এভিনিউ এক? আচ্ছা বলদ দেখি! ইফতারের পাঁচ মিনিট বাকি। তোর এই ছাতার পাথর মাথায় করে নিয়ে গাড়িতে উঠতেই লাগবে দশ মিনিট। নিয়ার আর জিনিস পাইলি না? দুনিয়ায় ফলের অভাব?

লিফ্ট বোঝাই করে মানুষ আসছে যাচ্ছে। ষোলো তলায় লিফ্ট থামছে ঠিকই, কিন্তু পা ফেলার জায়গা নাই। পনেরো মিনিট পর একটা লিফটে জায়গা পেয়ে চেপেচুপে ঢুকলাম। লোকজন বিস্ময়ে আমার কাঁধের কাঁঠালের দিকে চেয়ে রইলো।

আমরা সাতটা পয়তাল্লিশে লিফ্ট থেকে নেমে হাঁটা ধরলাম পার্কিং লটের দিকে। কিন্তু বিধি বাম, ভুলে বিল্ডিং এর পেছনের রাস্তা দিয়ে বের হলাম। আর ঢুকতে পারি না, লক হয়ে গেলো দরজা। এদিক দিয়ে হেঁটে যেতে কমপক্ষে আধা কিলোমিটার ঘুরে যেতে হবে।

রাস্তার মধ্যেই আমার বন্ধু বলল- রিপন দাঁড়া, নড়িস না। ইফতারী শুরু কর। সে আমার কাঁধের কাঁঠালটার সামনেটা ভেঙে মুখে দিয়ে চিবাতে থাকে; শিয়ালের মতো। তিন-চারটা কোয়া খাওয়ার পর আমার মুখেও চেপে দিলো একটা। অসাধারণ, চিনির মতো মিষ্টি। বললাম- দোস্ত, বিচিগুলা ফেলিস না, চিংড়ি দিয়ে ঘন্ট করবো।

সে কাঁঠাল খেয়ে বিচিগুলো আমার বুকপকেটে রাখতে লাগলো।

রাত আটটার দিকে রওনা দিলাম ড্যানফোর্থে খালার বাসার দিকে। ইফতারির বিশ মিনিট পর। জ্যামে আটকিয়ে গেলাম। বাংলা পাড়ায় আসার পর সে বলল- রিপন বাদ দে, যাওয়ার দরকার নাই

– কেন?

– ইফতারী না করে গেলে ভাববে খাইতে আসছে। এক কাজ করি চল; লোকজন এখন পাশের মসজিদ থেকে বের হবে। কাঁঠালটা পাশের মসজিদে দান করে আসি। সোয়াব হবে

– আস্ত কাঁঠাল দিয়ে দিবি?

– ঐ কাঁঠাল বাসায় নিয়ে ফ্রিজে রাখবি? সাড়া বাড়ি, ফ্রিজে কাঁঠালের গন্ধে মৌ মৌ করবে। এক হাড়ি ডালের কী হবে?

আমরা নামাজ শেষে মসজিদ কমিটির কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আসলাম কাঁঠাল বিতরণের। গাড়ির ভেতর থেকে ফোল্ডিং টেবিল, আর ওয়ান টাইম বাটি নিয়ে মসজিদের গেইটে দাঁড়িয়ে গেলাম। আমি চিল্লাতে থাকলাম- ভাইবোনেরা কাঁঠাল খান, বীচিগুলা ফেইলা যান!

মুসুল্লীরা হুমড়ি খেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো। দুই মিনিটের মধ্যে শেষ। বেশকিছু বিচিও জমে গেলো। কাঁঠাল শেষে আমরা মিষ্টির প্যাকেট দুইটাও খুলে মেলে ধরলাম..

বীচিগুলা পলিথিনে ভরে রওনা দিলাম ঢাকা বিরিয়ানির দিকে। তিন প্যাকেট বিরিয়ানি নিয়ে রওনা দিলাম বাসার দিকে। তবে আমার বন্ধুর মেজাজ খুব খারাপ, এ পর্যন্ত আর একটা কথাও বলেনি।

আমরা মারহাবা সুপারস্টার এ ঢুকলাম ঈদের বাজার করতে। দুই ব্যাগ ভর্তি বাজার আর দুইটা আঠারো আঠারো ছত্রিশ কেজির বেগম সিলা বাধমতি চালের বস্তা নিলো। সে আমার মাথায় চালের বস্তাূু দুটা তুলে দিয়ে ডান হাতে একটা বাজারের ব্যাগ তুলে দিল। আমি খুব সাবধানে ছোট ছোট স্টেপ ফেলে পার্কিং লটের দিকে হাঁটতে থাকি। তার এক হাতে বাজারের ব্যাগ, আরেক হাতে মোবাইল কানে ধরা।

বাসার দিকে রওনা দিলাম।

সে বলতে থাকে, কাল ঈদের জামাত কোথায় পড়বি?

– সুনাতুল জামাত মসজিদে

– প্রথম জামাত ধরবো। সাতটার। ঈদের দিন সকালে  তোর শুরু হয় খোঁজাখুৃঁজি। প্রতিবার লেট। এবার যদি দেখি তুই পাঞ্জাবিতে আগের ঈদের ঝোল ডলে ডলে তুলতেছিস, আল্লাহ’র কিড়া আমি তোকে থুয়ে নামাজে যাবো। তারপর ধীরে সুস্থে ইস্ত্রি করতে বসবি। প্রতিবার তোর এক কাহিনী! কোনো কিছুতে তুই সিরিয়াস না- বলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো রক্ত চক্ষু দিয়ে তাকিয়ে থাকলো।

সে এখন কথায় কথায় আমার দোষ ধরবে, পান থেকে জর্দা খসলেই গলা চেপে ধরবে..

 

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles