7.2 C
Toronto
শনিবার, মে ৩, ২০২৫

‘ঘণ্টাখানেক পরে শুনি আমার বুকের ধন আর দুনিয়ায় নেই’

‘ঘণ্টাখানেক পরে শুনি আমার বুকের ধন আর দুনিয়ায় নেই’ - the Bengali Times
ছবি সংগৃহীত

‘স্কুলে যেতে ৪০ টাকা গাড়ি ভাড়া দিলে মেয়ে আমার বলে— বাবা, ৪০ টাকায় হয়না, ৫০ টাকা দাও। পরে ৫০ টাকা মেয়ের হাতে দিয়ে সকাল ৯টার দিকে কর্মস্থলে চলে যাই। ঘণ্টাখানেক পর শুনি আমার বুকের ধন আর দুনিয়ায় নেই। মা তুই আমায় ছেড়ে কেমনে এভাবে চলে গেলি?’

সোমবার (২৯ জানুয়ারি) বেলা আড়াইটায় নগরের চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়ালী উদ্দিন আকবরের দপ্তরে বসে কাঁদতে কাঁদতে এসব কথা বলছিলেন হায়দার আলী। এদিন সকালে নিজের মালিকানাধীন দশতলা ভবন থেকে পড়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় তার মেয়ে স্কুল ছাত্রী মোনাম সামাদ তাহমিনের।

- Advertisement -

মেয়ের নিথর দেহ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রেখে তিনি ছুটে এসেছিলেন ওসির কাছে। সঙ্গে নিয়ে আসেন এলাকার কিছু মুরুব্বিও। পুলিশ কর্তাদের কাছে তার একটাই অনুরোধ ছিল— ময়নাতদন্ত ছাড়াই যেন আদরের মেয়ের মরদেহ ফেরত পান। কিন্তু আইনি বাধ্যবাধকতা থাকায় তার সেই অনুরোধ রাখতে পারেননি পুলিশ কর্মকর্তারা। অবশেষে কাঁদতে কাঁদতে ফিরে গেলেন মর্গে।

তালাবদ্ধ ঘরে মিলল বাবা-মা ও মেয়ের গলাকাটা মরদেহতালাবদ্ধ ঘরে মিলল বাবা-মা ও মেয়ের গলাকাটা মরদেহ
সেখানে (মর্গে) ফিরে যাওয়ার আগে মেয়ে তাহমিনের নানা স্মৃতির কথা এই প্রতিবেদকের কাছে তুলে ধরেন হায়দার আলী। হাউমাউ করে কান্না করে বলেন, ‘আমার জাদু অনেক মেধাবী ছিল। সে মাদারবাড়ি সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। এবার নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। তাহমিন চোখে হালকা ঝাপসা দেখত; রোদে গেলে মাথা ঘোরাত। এ কারণে চশমা ব্যবহার করত সে। আমার ভবনের ছাদে বাগান আছে। সে প্রায় সময় ছাদে যেত বাগানের ফুল দেখতে। সম্ভবত ফুলের ছবি তুলতে গিয়ে অসাবধানতাবশত রেলিং ভেঙে নিচে পড়ে যায়।’

এদিন বেলা তিনটার দিকে তাদের চন্দনপুরার নেপচুন টাওয়ারের দশ তলার বাসায় গিয়ে দেখা যায়, মেয়েকে হারিয়ে একটি কক্ষে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন মা। তিনি আহাজারি করেই চলেছেন। শোকে স্তব্ধ আত্মীয় স্বজনেরা। তাহমিনের মৃত্যুর খবর পেয়ে তার সহপাঠী ও শিক্ষকেরা দলে দলে আসছেন। সহপাঠীদের জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন মা। কখনো মেয়ের স্কুল ব্যাগ, কখনো তার স্কুলের পোশাক বুকে নিয়ে অঝোর কান্না করছেন। এসময় তাহমিনের সহপাঠীরাও কান্না করতে থাকেন।

সায়মা আজাদ নামে তাহমিনের এক সহপাঠী বলেন, ‘সে অনেক মেধাবী ছিল। ক্লাসে সর্বদা প্রাণবন্ত থাকত। স্যারেরা তার পড়াশোনায় মুগ্ধ হতেন। প্রকৃতিকে সে বেশি ভালবাসত।’ তাহমিনের বাবা হায়দার আলী নগরের আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে আরএফএল শোরুমে চাকরি করেন। নিজের মালিকানাধীন ওই ভবনের দশম তলায় তিন মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে বসবাস করতেন তিনি।

হায়দার আলী জানান, সকাল ৯টার দিকে আগ্রাবাদ এলাকায় কর্মস্থলে চলে যান তিনি। যাওয়ার আগে স্কুলে যেতে মেয়ের হাতে ৪০ টাকা গাড়ি ভাড়াও দেন তিনি। পরে আরও ২০ টাকা চেয়ে নেয় তাহমিন। এর আগে ছোট মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিতে যান স্ত্রী। সকাল ১০টার দিকে তিনি খবর পান বুকের ধন আর দুনিয়ায় নেই।

সোমবার রাতে চকবাজার থানার ওসি ওয়ালী উদ্দিন আকবর জানান, মঙ্গলবার স্কুল ছাত্রী মোনাম সামাদ তাহমিনের ময়নাতদন্ত করা হবে।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles