-0 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

বাপজান তুই আইছস

বাপজান তুই আইছস - the Bengali Times
ছবিথট ক্যাটালগ

ভ্যান গাড়িটি বহুসময় ধরে ঢাকার যানজট পার হয়ে পদ্মা নদীর পারে এসে দাঁড়ালো। কত মানুষের কত প্রশ্ন কার লাশ গাড়িতে? কী নাম মানুষটির? কবে উদ্ধার হলো? জীবিত নাকি মৃত পাওয়া গেছে? গফুর মিয়ার এসব প্রশ্নের জবাব দিতে ইচ্ছে করে না। মুখ তেতো হয়ে আসে। উৎসুক জনতা উঁকিঝুঁকি দেয় যদি গাড়িটির আয়না দিয়ে ভেতরের কিছু দেখা যায়। অবশেষে গাড়িটি পদ্মা পার হলো। গাড়িটি ছুটে চলেছে। শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে। দিনের আলোও প্রায় মিলিয়ে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। গফুর মিয়া কিছুক্ষণ পরপরই গাড়ি চালককে বলছেন, ‘ভাই একটু জোরে চালান গাড়িটা, রাত হইয়া গেলে কবরে নানা সমস্যা হইবো। ’ গ্রামের এবরো থেবরো রাস্তা দিয়ে বেশি জোরে গাড়ি চালানো সম্ভব হয় না। গ্রামের ভেতর যখন ঢোকে গাড়িটি তখন প্রায় সন্ধ্যা নেমে এসেছে। দূরের বাড়িগুলোতে মৃদু আলোর রশ্নি দেখা যাচ্ছে। দুই পাশের বাঁশঝাড়গুলো কেমন যেন স্বব্ধ হয়ে গফুর মিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। এই সন্ধ্যাবেলা কী পাখি এটা? মরা ডালটার উপর বসে গফুর মিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে? গফুর মিয়ার কেমন যেন ভয় লাগতে থাকে। পেছন থেকে নয়নের গলা শোনা গেল, ‘চাচা আমরা কি গ্রামে ঢুকছি?’ কে? কে?

এটা তো নয়নের গলা। নয়ন তো মরে গেছে। ওর মৃত দেহ বরফ চা পাতা দিয়ে বাক্সে ঢুকানো হয়েছে। তাহলে কে কথা বললো? গফুর মিয়া কাঁপা কাঁপা গলায় গাড়ির চালককে জিজ্ঞেস করেন,‘ভাই আপনি কি কারো কথা শুনতে পাইছেন?’ গাড়ির চালক মাথা নাড়ে, সে শুনতে পায়নি। গফুর মিয়া বুঝতে পারে এটা তার মনের ভুল। তিনি দোয়া পড়ে বুকে ফুঁ দেন।

- Advertisement -

এই তো একবছর আগে গফুর মিয়া নয়নকে নিয়ে ঢাকায় আসে কোনো একটা কাজে ঢুকিয়ে দেবার জন্য। অভাবের সংসার। নয়নের বাবা অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছে চার বছর থেকে। যা একটু আধটু জমি-জমা ছিল তাও নয়নের বাবার চিকিৎসা, সংসারের খাওয়া পরায় নেমে এসেছে শূন্যের খাতায়। নয়ন দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়লেও তার এসএসসি পরীক্ষাটা আর দেয়া হলো না অর্থের অভাবে। নয়নের মা এবাড়ি-ওবাড়ির কাঁথা সেলাই করে। মুন্সি বাড়িতে কাপড় কাচে, মসলা বাটে। কিন্তু তাদের তো এত খারাপ অবস্থা ছিল না, যতদিন নয়নের বাবা সুস্থ ছিল। নয়নের কান্না পায় মায়ের এমন কষ্ট দেখে। ছোটবোন টুনি স্কুলে যায় কিন্তু কতদিন যেতে পারবে কে জানে? নয়ন গ্রামে এদিক-সেদিক ছোটখাট কাজ করে।

গফুর মিয়া ঢাকা শহরে ছোটখাট ব্যবসা করে। দুই তিন মাস পর পরই গ্রামে আসে। নয়ন গফুর মিয়াকে ধরে বসে, ‘চাচা ঢাকা শহরে আমার একটা কাজ জোগাড় কইরা দেন, মায়ের এত কষ্ট আমার আর সহ্য হয় না। ’ নয়ন আর নয়নের মায়ের অনুরোধে গফুর মিয়া নয়নকে নিয়ে রওয়ানা হয় ঢাকার পথে। বাসে বসে নয়নের কত প্রশ্ন করে গফুর মিয়াকে, ‘চাচা ঢাকার মানুষ কেমন? আমি একটা কাজ পামু তো চাচা?’

গফুর মিয়া জবাব দেয়, ‘চিন্তা করিস না একটা ব্যবস্থা হবেই। আমার পরিচিত মানুষ আছে গার্মেন্টস-এ, তোকে ঢুকাইয়া দেবো।’ নয়নের চোখ চিক চিক করে উঠে খুশিতে। আবার প্রশ্ন করে গফুর মিয়াকে, ‘চাচা আমি পারমু তো সেলাইর কাজ করতে? এটা তো মেয়ে মানুষের কাজ।’ বলে নয়ন নিজে নিজেই হাসে। গফুর মিয়া নয়নকে আশ্বস্ত করে, ‘পারবি পারবি, ওরা ট্রেনিং দিয়া নিবে। ’ নয়নকে পোশাক শ্রমিক হিসাবে পোশাক কারখানায় ঢুকিয়ে দেন গফুর মিয়া পরিচিত একজনকে বলে। নয়ন দুই মাস ট্রেনিং নিয়ে নিয়মিত কাজ শুরু করে। মাসের শেষে টাকা পেয়ে মাকে পাঠিয়ে দেয়। ওর বড় শান্তি লাগে ভেবে, সে রোজগার করে সংসারের দায়িত্ব নিতে পেরেছে। কাজ শুরু করার পর নয়ন তার মাকে চিঠি লিখে পাঠায় গফুর মিয়ার হাতে।

মাগো,
কেমন আছো তোমরা? বাবা কেমন আছে? আমি ভালো আছি মা। গফুর চাচা আমাদের বড় উপকার করলো। এই কাজটা না পেলে আমাদের কষ্ট বেড়েই চলতো। আমি অনেক খুশি মা। গফুর চাচা কারখানার আরো কয়েকজনের সাথে আমার থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। উনারা অনেক ভালো, আমাকে অনেক স্নেহ করেন। আমরা সবাই মিলে রান্না করে খাই। মা, তুমি বোধহয় শুনে হাসছো, আমি কী করে রান্না করি। পারি মা সবই পারি, প্রয়োজনে সবই করতে হয়।

ম্যাল্টন, অন্টারিও, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles