2.9 C
Toronto
বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪

শিগগির ঐক্যের ডাক দেবে বিএনপি

শিগগির ঐক্যের ডাক দেবে বিএনপি - the Bengali Times
সরকারবিরোধী দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে ঐক্য প্রক্রিয়াকে বাস্তবে রূপ দিতে চায় বিএনপি

শিগগিরই জাতীয় ঐক্যের রূপরেখা দেবে বিএনপি। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই রূপরেখা তুলে ধরে ঐক্যের ডাক দেবে দলটি। এর পর দেশের সরকারবিরোধী দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে ঐক্য প্রক্রিয়াকে বাস্তবে রূপ দিতে চায় বিএনপি। তবে সংবাদ সম্মেলনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও এ বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু আমাদের সময়কে বলেন, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জাতীয় ঐক্য গঠনের কাজ চলছে। আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলেছি। সবাই একমত হয়েছে, ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে তারা অংশ নেবে না। শিগগির বিএনপি জাতীয় ঐক্যের ডাক দেবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আকাশে চাঁদ উঠলে সবাই দেখতে পাবে। যখন হবে তখন সবাই দেখতে পাবেন।

- Advertisement -

স্থায়ী কমিটির অন্য দুই সদস্য আমাদের সময়কে বলেন, গত সোমবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সেখানে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করব। যারা আমাদের সঙ্গে আসতে চাইবে তাদের নিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী বা ভিন্ন নামে মঞ্চ গঠন করা হবে।

ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত রমজানের আগে থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ভেতরে ভেতরে আলোচনা করছেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ইতোমধ্যে ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকরাসহ ৩০টি দলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় সবাই একমত পোষণ করেছেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বর্তমান সরকারের অধীনে কেউ নির্বাচনে যাবে না। এটিকে ভিত্তি ধরেই একটি ঐক্য গড়ার চেষ্টা এগিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে দলগুলোর সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা শেষ হয়েছে। চলতি সপ্তাহে দৃশ্যমান আলোচনার নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু গত সোমবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেখান থেকে সরে এসেছে দল। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগে জাতির সামনে রূপরেখা তুলে ধরে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেওয়া হবে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি এই ঐক্যের ডাক দেবেন।

এদিকে ‘জাতির সংকট নিরসনে জাতীয় সরকার’ শিরোনামে একটি প্রস্তাব গত রবিবার গভীর রাতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তার প্রস্তাবে ৯ মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন এবং এর পরের ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার কথা বলা হয়েছে। এই প্রস্তাব প্রসঙ্গে বিএনপির কোনো পর্যায়ের নেতারা মন্তব্য করতে চাননি।

দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এ নিয়ে বিএনপিতে এক ধরনের অস্বস্তি কাজ করছে। দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, বিগত ওয়ান-ইলেভেন সরকারের মতো একটা কিছু হতে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। ডা. জাফরুল্লাহ যে প্রস্তাব দিয়েছেন, সেখানে ক্ষমতাসীনদের চাওয়ারও একটা মিল পাওয়া গেছে বলে মনে করে নেতারা।

বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতা বলেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যে মামলা দেওয়া হয়েছে, তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। এসব মামলা প্রত্যাহার নিয়ে কোনো কথা বলেননি ডা. জাফরুল্লাহ। উল্টো তার প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সব রাজনৈতিক কর্মী ও আলেমদের জামিন নিশ্চিত করে এক বছরের মধ্যে তাদের বিচার শেষ করে রায় কার্যকর করা হবে। স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দলের নেতারা।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী তার প্রস্তাবিত জাতীয় সরকারে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও বিশিষ্টজনদের পাশাপাশি বিএনপির প্রতিনিধি হিসেবে নারী ও যুব উন্নয়নে তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমান এবং পররাষ্ট্র ও বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের নাম প্রস্তাব করেছেন।

এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন শামা ওবায়েদ। তিনি বলেন, বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে দলের সিদ্ধান্তই আমার কাছে চূড়ান্ত। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী যে প্রস্তাব করেছেন, সেটা তার কল্পনাপ্রসূত। এর সঙ্গে আমার কোনো রকম সম্পর্ক নেই। এ বিষয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী তার সঙ্গে কোনো রকম যোগাযোগ করেনি বলে জানান শামা ওবায়েদ। গণমাধ্যম থেকে এই প্রস্তাবের কথা জেনেছেন বলে জানান তিনি।

জাতীয় সরকার প্রস্তাবের বাইরে জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে বিএনপির সন্দেহের আরেকটি কারণ হচ্ছে- বিএনপির ঐক্য প্রচেষ্টার মধ্যেই পাঁচটি দল ও দুটি সংগঠন নতুন রাজনৈতিক ‘মোর্চা’ গঠনে বৈঠক করেছে, যাদের অধিকাংশের সঙ্গে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের আলোচনা চলছিল। এগুলো হচ্ছে- জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এবং ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।

সম্প্রতি এ বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর আমাদের সময়কে বলেন, বিএনপি নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি। আমাদের সিদ্ধান্ত, জামায়াত বা ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে এই জোটে যুক্ত করা হচ্ছে না। তবে তারা যদি পৃথকভাবে কর্মসূচি করে সেক্ষেত্রে বাধাও দেওয়া হবে না। ‘৯০-এ পৃথক পৃথক জোট অভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করে সফল হয়েছে। সে ক্ষেত্রে অভিন্ন দাবিতে আন্দোলন হতে পারে।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles