0.6 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪

শ্রমিককে যে সম্মান ও অধিকার দিয়েছে ইসলাম

শ্রমিককে যে সম্মান ও অধিকার দিয়েছে ইসলাম

আজ ঐতিহাসিক শ্রমিক দিবস পহেলা মে। শত বছর আগে শ্রমিকরা ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে পুঁজিবাদদের হাতে নিষ্পেষিত ও নিপীড়িত হতো অহরহ। মালিকদের সেই জুলুম নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে শুরু হয় আন্দোলন। আন্দোলন দমন করতে শত শত নিরীহ শ্রমিক নিহত হয়। এরপর থেকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পহেলা মে শ্রমিক দিবস। পহেলা মে আসলে দেখা যায় লাল পতাকা আর মিছিল মিটিং। অথচ শ্রমিকরা আজও হীন তুচ্ছতাচ্ছিল্য। পুঁজিবাজারে তারা ধনীদের ওপরে উঠার মাধ্যম। আর ইসলাম দিয়েছে শ্রমিকদের যথাযথ সম্মান। মালিকদেরকেও শুনিয়েছে আদল ইনসাফভিত্তিক বাণী।

- Advertisement -

ইসলামে যে ব্যক্তি স্বাবলম্বীতার পরিচয় দেয়, এমন শ্রমিক ও শ্রমজীবী আল্লাহর প্রিয়। বায়হাকী শরিফের হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, ‘শ্রমজীবী আল্লাহর বন্ধু’।আল্লাহ নিজে এদের প্রশংসা করে বলেছেন, ‘এমন বহু লোক আছে যারা জমিনের দিকে দিকে ভ্রমণ করে আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) খুঁজে বেড়ায়।’ (সুরা মুযযাম্মিল, আয়াত-২০) ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পদের সার্বভৌমত্ব ও মালিকানা আল্লাহর, আর মানুষ তার তত্ত্বাবধায়ক মাত্র। সুতরাং এখানে মালিক-শ্রমিক সবাই ভাই ভাই। তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক হবে শ্রদ্ধা-স্নেহ, সৌহার্দ ও বিশ্বস্ততায় ভরপুর।

শ্রমিক ও মালিক উভয়ের অধিকার রয়েছে নিজ নিজ প্রাপ্য বুঝে পাওয়ার। উভয়কে বলা হয়েছে নিজ নিজ কর্তব্য পালনে দায়িত্বশীল হতে। শুধু মালিক বা শুধু শ্রমিক নয়; বরং উভয়কে সুসংহত আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছে। ইসলাম শ্রমের শ্রেণিবিন্যাসকে স্বীকার করলেও মানবিক মূল্যবোধ ও মৌলিক মানবাধিকারের ক্ষেত্রে সবাই সমান। রাসুলুল্লাহ (সা.) ব্যবসা, কৃষি ও দ্বীনচর্চাকে উৎসাহিত করেছেন। আবার মর্যাদার ক্ষেত্রে সব শ্রমিক সাধারণভাবে সমান ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, শ্রমজীবী আল্লাহর বন্ধু। ইসলাম শ্রমিককে বলেছে, দক্ষ, বিশ্বস্ত ও দায়িত্ববান হতে। কোরআনে আদর্শ শ্রমিক হিসেবে হজরত মুসা (আ.)-এর বৈশিষ্ট্য এভাবে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে পিতা! আপনি তাকে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দিন। নিশ্চয় আপনার শ্রমিক হিসেবে সে-ই উত্তম যে সামর্থ্যবান ও বিশ্বস্ত। (সুরা কাসাস, আয়াত : ২৬)

পরবর্তী আয়াতে নিয়োগদাতা শোয়াইব (আ.)-এর সঙ্গে নিয়োগপ্রাপ্ত মুসা (আ.)-এর মজুরি নির্ধারণের বিবরণ এসেছে। পরে বিরোধ এড়াতে উভয়ের সম্মতিতে প্রথমেই মজুরি নির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছেন। ইসলামী শ্রমনীতির শ্রেষ্ঠত্ব ও স্বাতন্ত্র্য এখানেই যে ইসলাম মালিক ও শ্রমিকের জন্য অভিন্ন খাবার ও বস্ত্রের নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশনার আলোকে বোঝা যায়, ইসলাম একটি উচ্চ মানসিকতাসম্পন্ন শ্রমনীতির কথা বলেছে, যেখানে শ্রমিকের মানসম্মত জীবন-জীবিকা নিশ্চিত হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তারা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীন করেছেন। সুতরাং যার ভাইকে তার অধীন করেছেন সে যেন তাকে তাই খাওয়ায় যা সে খায়, সে কাপড় পরিধান করায়, যা সে পরিধান করে। তাকে সামর্থ্যের অধিক কোনো কাজের দায়িত্ব দেবে না। যদি এমনটা করতেই হয়, তাহলে সে যেন তাকে সাহায্য করে। (বুখারি, হাদিস : ৫৬১৭)

শ্রমিকের মর্যাদাপূর্ণ জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব মালিকেরই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মালিকানাধীন (অধীন) ব্যক্তির জন্য খাবার ও কাপড়ের অধিকার রয়েছে। (মুসলিম, হাদিস : ১৬৬২)। অন্য হাদিসে তিনি বলেছেন, যে আমাদের কর্মী নিযুক্ত হয়েছে সে যেন (প্রতিষ্ঠানের খরচে) একজন স্ত্রী সংগ্রহ করে, সেবক না থাকলে সে যেন একজন সেবক খাদেম সংগ্রহ করে এবং বাসস্থান না থাকলে সে যেন একটি বাসস্থান সংগ্রহ করে। যে ব্যক্তি এর অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করবে সে প্রতারক বা চোর গণ্য হবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৯৪৫)

বেতন ও পারিশ্রমিক কর্মজীবীর অধিকার। ইসলাম দ্রুততম সময়ে তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ঘাম শুকানোর আগেই শ্রমিকের পারিশ্রমিক দিয়ে দাও। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৪৪৩০) অন্য হাদিসে পারিশ্রমিক ও প্রাপ্য অধিকার নিয়ে টালবাহানাকে অবিচার আখ্যায়িত করা হয়েছে। মহানবী (সা.) বলেন, ধনী ব্যক্তির টালবাহানা অবিচার। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২২৮৭) অর্থাৎ সামর্থ্য থাকার পরও মানুষের প্রাপ্য ও অধিকার প্রদানে টালবাহানা করা অন্যায়।

মালিকের জন্য প্রথম দায়িত্ব হলো আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রমিক নির্বাচন করা। তারপর শ্রমিক নিয়োগের আগে মালিককে অবশ্যই শ্রমিকের সময় (কর্ম ঘণ্টা) ও মজুরি (বিনিময় পারিশ্রমিক) নির্ধারণ করে নেয়া। শ্রমিকের শেষ হওয়ার পর তার ঘাম শুকানোর আগেই পারিশ্রমিক দিয়ে দেওয়া। শ্রমিক ও মালিকের পারস্পরিক সুসম্পর্ক তখনই প্রতিষ্ঠিত হবে যখন উল্লেখিত বিষয়গুলোর যথাযথভাবে পালিত হবে। যখন এর ব্যতিক্রম ঘটবে তখনই মালিক ও শ্রমিকের সম্পর্ক ও দায়িত্বে দ্বন্দ্ব এবং অসন্তোষ সৃষ্টি হবে। ফলে মালিকের যেমন কাজে বিঘ্ন ঘটবে এবং ক্ষতি হবে; তেমনি শ্রমিকও তার ন্যায্য পাওনা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।

এ কারণেই প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে পাকে শ্রমিক নিয়োগ সম্পর্কে ঘোষণা করেছেন- ‘নিশ্চয় শ্রমিকের মজুরি (কাজের ধরণ ও দায়িত্ব) নির্ধারণ না করে তাকে কাজে নিয়োগ করিও না।’ (মুসলিম) কুরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা মেনে চলার মধ্যেই রয়েছে শ্রমিক ও মালিকের পারস্পরিক সুসম্পর্ক বজায় রাখার উপায়। ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রথমিক কাজ যথাযথ পালনের মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগ দেয়ার পর মালিকের পরবর্তী দায়িত্ব হচ্ছে- ‘শ্রমিককে দেওয়া দায়িত্ব ও কাজ বুঝে নেওয়া এবং পারিশ্রমিক দিয়ে দেওয়া।’বিশ্বব্যাপী শ্রমিক ও মালিকের অধিকার এবং পারস্পরিক সুসম্পর্ক রক্ষায় কুরআন-সুন্নাহ দিকনির্দেশনাই হোক শান্তি প্রতিষ্ঠা ও নিরাপদ সমাজ বিনির্মাণের অন্যতম উপায়। আল্লাহ তাআলা সবাইকে উল্লেখিত দিকনির্দেমনা মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles