11.6 C
Toronto
মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৩, ২০২৪

‘অজস্র যন্ত্রণা শেষে ঘুমিয়ে গেলো আপা’

‘অজস্র যন্ত্রণা শেষে ঘুমিয়ে গেলো আপা’ - the Bengali Times
ফাহমিদা কামাল

বোন ফাহমিদার সঙ্গে জুনায়েদের সখ্যতা ছিল ভীষণ। ফাহমিদাও চোখে হারাতে চাইতেন না ভাইকে। ভাইবোনের অপত্য ভালোবাসার এমন গল্পে যতিচিহ্ন টেনেছে মরণব্যাধি ক্যান্সার। ভাইকে ছেড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন ফাহমিদা।

চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকালে মারা যান ফাহমিদা কামাল। নাকে অক্সিজেনের নল, পরনে বিয়ের লাল বেনারসি, পাশে বর-এমন ছবিতে কোটি মানুষের চোখে জল আনা ফাহমিদার গল্পটা অসমাপ্তই রয়ে গেল।

- Advertisement -

সোমবার দুপুরে ফাহমিদার মরদেহ নেওয়া হয় তার পৈতৃক ভিটা দক্ষিণ বাকলিয়া হাজী আবদুস সালাম মাস্টারের বাড়িতে। সেখানে কথা হল তার ভাই জুনায়েদ কামালের সঙ্গে।

অশ্রুসজল জুনায়েদ সমকালকে বলেন, ‘গত এক বছর ধরে বোনটা আমার কী অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করল। দেশের হাসপাতাল থেকে ভারত, আবার দেশে ফিরিয়ে আনা, আমি আমার বোন থেকে একটু দূরে থাকতে পারতাম না। আজকে আমার বোনটা আমাকে ছেড়ে কত দূরে চলে গেলো। আর তো তাকে দেখতে পাব না। কী করে থাকব?’

দাফনের সার্বিক প্রস্তুতি দেখভাল করছিলেন ফাহমিদার স্বামী মাহমুদুল হাসান। একটু দূরে দাঁড়িয়ে মেয়ের অন্তিমযাত্রার শেষ অঙ্কটা দেখছেন বাবা এসএম কামাল উদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘কাল (রোববার) মধ্যরাতে মেয়েটা আমার বলে উঠল, আব্বা শরীর কেমন করে। সে খুব অস্থির হয়ে উঠল। আমি বললাম, মা গো আল্লাহরে ডাকো। তিনি নিশ্চয় তোমারে ভালো করে দেবেন। আমার মেয়েটা তো বাঁচতেই চাইছিল। কিন্তু…..’

সুনসান নীরবতা ভাঙে বাবার গগনবিদারী আহাজারিতে, অন্দরমহল থেকেও ভেসে আসে কান্নার রোল। বাতাসে কর্পূরের ঘ্রাণ ভাসে। সোমবার বিকেলেই প্রিয় জন্মভূমি, পৈতৃক ভিটাতেই চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন ফাহমিদা। প্রিয়তম মাহমুদুল গোরে শেষ মাটি দেবেন।

চট্টগ্রামের দক্ষিণ বাকলিয়ার চর চাক্তাই এলাকার বাসিন্দা ফাহমিদা কামাল গত বছরের জানুয়ারি মাসে আক্রান্ত হন রেকটাম ক্যান্সারে। পরে মরণব্যাধি এই রোগ থেকে বাঁচতে লড়াই শুরু করে ফাহমিদা ও তার পরিবার এবং স্বজনরা। এরইমধ্যে দেশের পাশাপাশি ভারতে গিয়েও করিয়েছেন চিকিৎসা। কিন্তু কোনো চিকিৎসা কাজে আসেনি। ভারত থেকে চিকিৎসা নিয়ে ফেরার পর শারীরিক অবস্থার উন্নতির বদলে আরও অবনতি হতে থাকে তার।

দিন দিন ফাহমিদার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় চট্টগ্রামের তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শারীরিক এমন অবস্থার মধ্যেই ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন কক্সবাজারের চকরিয়ার সন্তান মাহমুদুল হাসান। তার এমন সিদ্ধান্তে অনেকটা হবাক হন সবাই।

ফাহমিদা রাজি না থাকলেও গত ৯ মার্চ হাসপাতালের শয্যাতেই প্রিয়তমাকে বিয়ে করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন মাহমুদুল হাসান। সেই হাসপাতালেই চলে তাদের সুখের সংসার। মাঝে একদিন তারা গিয়েছিলেন বাসায়। কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ফের হাসপাতালেই পেতেছেন তারা সংসার। কথা ছিল সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে নতুন করে সংসার শুরু করবেন ফাহমিদা ও মাহমুদুল। কিন্তু ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে সংসার করার স্বপ্ন আর পূরণ হলো না ফাহমিদার। তার এমন মৃত্যুকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না স্বামী মাহমুদুল।

 

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles